বুধবার রাশিয়া ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে দ্বিতীয় দফার আলোচনা হবার কথা থাকলেও এখনও পর্যন্ত যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ নেই। এদিনই ইউক্রেনে রাশিয়ার 'বিশেষ সামরিক অভিযান' সপ্তম দিনে প্রবেশ করলো। একপ্রস্থ শান্তি আলোচনা হয়ে যাবার পরেও এখনও যুদ্ধ অব্যাহত। বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আক্রমণের তীব্রতা আরও বাড়াচ্ছে রাশিয়া।
ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভের কেন্দ্রে মঙ্গলবার এক বিশাল রুশ বিমান হামলার খবর পাওয়া গেছে। রাশিয়ান রকেট আবাসিক এলাকা এবং আঞ্চলিক রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের দপ্তরগুলোতে আঘাত হানে। জিংহুয়া সংবাদসংস্থা ইউক্রেনের স্টেট সার্ভিস ফর এমারজেন্সির উদ্ধৃতি দিয়ে একথা জানিয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, কিয়েভ টিভি টাওয়ারে রাশিয়ার হামলায় পাঁচজন নিহত ও পাঁচজন আহত হয়েছে।
রাশিয়া ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনীর তথ্য কেন্দ্র এবং মনস্তাত্ত্বিক অপারেশন কেন্দ্রের পাশাপাশি কিয়েভে ইউক্রেনীয় নিরাপত্তা পরিষেবার প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রগুলোতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন-নির্ভুল অস্ত্র দিয়ে হামলা চালাবে বলে জানিয়েছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইগর কোনাশেনকভ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে একথা বলেছেন।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু জানিয়েছেন, পশ্চিমি হুমকি থেকে রাশিয়াকে রক্ষা করার মূল লক্ষ্য অর্জন না করা পর্যন্ত ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালিয়ে যাওয়া হবে।
ঊর্ধ্বতন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের সাথে একটি ভিডিও কনফারেন্স চলাকালীন শোইগু বলেন, "আমাদের প্রধান বিষয় হল পশ্চিমি দেশগুলির দ্বারা সৃষ্ট সামরিক হুমকি থেকে রাশিয়াকে রক্ষা করা। যা আমাদের দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনের জনগণকে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে।"
কোনাশেনকভ জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত রাশিয়ান সশস্ত্র বাহিনী ইউক্রেনের ১,৩২৫টি সামরিক পরিকাঠামো ধ্বংস করেছে। এছাড়াও, ৩৯৫টি ট্যাঙ্ক এবং অন্যান্য সাঁজোয়া যুদ্ধ যান, ৫৯টি লঞ্চ রকেট সিস্টেম, ১৭৯টি ফিল্ড আর্টিলারি বন্দুক এবং মর্টার এবং ২৮৬টি বিশেষ সামরিক যান ধ্বংস করা হয়েছে বলেও তিনি জানান। কোনাশেনকভ সাংবাদিকদের বলেন, আজভ সাগরে ইউক্রেনের সেনাদের প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার চাপ বাড়াতে এবং ইউক্রেনকে আরও অস্ত্র ও আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য পোল্যান্ড, ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের আহ্বান জানিয়েছেন।
দুই দেশের মারাত্মক সংঘাতের মধ্যে, রাশিয়ান এবং ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিরা সোমবার বেলারুশের গোমেল অঞ্চলে সঙ্কটের সমাধানের সন্ধানে তাদের প্রথম দফা আলোচনার অংশ নেয়। যদিও এই আলোচনায় যুদ্ধবিরতিতে কোন সুস্পষ্ট অগ্রগতি হয়নি।
সূত্র উদ্ধৃত করে TASS সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, বুধবার শান্তি আলোচনার দ্বিতীয় দফা অনুষ্ঠিত হবে।
বেলারুশিয়ান প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো আলোচনায় অগ্রগতি হলে রাশিয়ান ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টদের মধ্যে বৈঠকের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি। বেলটিএ সংবাদ সংস্থাকে উদ্ধৃত করে একথা জানিয়েছে জিং হুয়া। তবে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন যে এই জাতীয় উচ্চস্তরীয় বৈঠকের বিষয়ে এত দ্রুত কিছু বলা সম্ভব নয়।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন