ইউক্রেনের সঙ্গে সংঘাতের পর এবার দেশের অন্দরমহলেই যুদ্ধের পরিস্থিতি দেখা দিল রাশিয়ায়। ইতিমধ্যেই রাশিয়ার প্রতিরক্ষা বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন সে দেশের বেসরকারী সেনাবাহিনী ‘ওয়াগনার’-এর প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন। পাশাপাশি তিনি দাবি করেছেন, তার বাহিনীর উপরে ক্ষেপনাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে মস্কোর সরকারি সেনাবাহিনী। যার ফলে তার ওয়াগনার বাহিনীর প্রায় ২০০০ জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে বলেও অভিযোগ তাঁর। ইতিমধ্যেই দক্ষিণ রাশিয়ার রোস্তভ শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ওয়াগনার এবং শনিবার তিনি তাঁর বাহিনী নিয়ে মস্কোর দিকে রওনা দেবেন, শুক্রবার এমনটাই জানিয়েছিলেন প্রিগোজিন। শনিবার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, মস্কো থেকে ৫০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ভরোনেজ শহরের ঠিক বাইরে M4 হাইওয়েতে ওয়াগনার বাহিনীর কনভয়ের উপর হামলা চালিয়েছে রুশ বায়ুসেনা।
‘ওয়াগনার’ আসলে রাশিয়ার একটি কুখ্যাত বেসরকারী ভাড়াটে রক্ষীবাহিনী, যা আন্তর্জাতিক মহলে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ‘নিজস্ব সেনা’ হিসেবেও পরিচিত। গত বছর ইউক্রেনের সঙ্গে সংঘাতের সময় রাশিয়ার সাধারণ মানুষকে তাঁর বাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানান ‘ওয়াগনার’ প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন। বিগত প্রায় একমাস ধরে রাশিয়া সরকারের সঙ্গে তাঁর ‘ঠাণ্ডা যুদ্ধ’ চলছিল বলে জানা যাচ্ছে রুশ সংবাদমাধ্যম সূত্রে। অবশেষে, শুক্রবার রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ ঘোষণা করেন প্রিগোজিন। একটি রেডিওবার্তা দিয়ে তিনি দাবি করেছেন, শুক্রবার তাঁর সৈন্য বাহিনীর উপর মারাত্মক মিসাইল হামলা চালিয়েছে রাশিয়ার সেনা। যার ফলে তাঁর প্রচুর সেনা জওয়ান প্রাণ হারিয়েছেন। এর প্রতিশোধ নেওয়ার উদ্দেশ্যেই প্রিগোজিন হামলাকারী রুশ সেনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন।
মস্কোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রস্তুতি হিসেবে ওয়াগনার বাহিনী রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের শহর রোস্তভ-অন-ডনে ঘাঁটি গেড়েছে বলেও জানিয়েছেন বেসরকারী রক্ষী বাহিনী প্রধান। শুক্রবার তিনি আরও জানিয়েছিলেন, শনিবার ওয়াগনার বাহিনী রোস্তভ শহর থেকে মার্চ করে মস্কোর দিকে যাওয়ার সময় তাদের সামনে যা কিছু আসবে তা সব ধ্বংস করে দেবে। তাঁর বক্তব্য, “আমরা এগিয়ে চলেছি এবং আমরা শেষ পর্যন্ত যাবো। কারণ, আমরা এর শেষ দেখতে চাই।” রুশ প্রশাসনের পতনের ডাক দিয়ে রাশিয়ার সাধারণ মানুষকে তাদের পাশে থাকার জন্য অনুরোধ করেছেন ইয়েভজেনি প্রিগোজিন।
রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকেও এই বেসরকারী রক্ষী বাহিনীকে যোগ্য জবাব দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। রুশ সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, প্রিগোজিনকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রুশ প্রশাসন জানিয়েছে, ওয়াগনার প্রধানের চোখ রাঙানিতে কিছু মাত্র ভয় পায়নি রাশিয়া। ইতিমধ্যেই মস্কো-সহ প্রায় সমস্ত বড় শহরেই নিরাপত্তা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজধানী মস্কোর মেয়র সেরগেই সোবিয়ানিন জানিয়েছেন, “আমাদের কাছে যা যা তথ্য এসেছে তার ভিত্তিতে প্রশাসন সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে।” অন্যদিকে, দেশের ভিতরের এই অভ্যন্তরীণ সশস্ত্র বিদ্রোহকে দমন করতে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে বেশ বেগ পেতে হবে বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ মহল।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন