সুষম খাদ্য জোগাড় করতে পারছে না ভারতের ৯৭ কোটি মানুষ। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭১ শতাংশ মানুষের সামর্থ্য নেই স্বাস্থ্যকর খাবার জোগারের। সম্প্রতি এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এনেছে রাষ্ট্রসংঘের ‘খাদ্য ও কৃষি সংস্থা’ (FAO)।
গত বুধবার, রাষ্ট্রসংঘের ‘খাদ্য ও কৃষি সংস্থা’র রিপোর্টে বলা হয়েছে, এশিয়া মহাদেশের ৪৩.৫ শতাংশ মানুষ সুষম আহার থেকে বঞ্চিত। আফ্রিকার ৮০ শতাংশ মানুষ পুষ্টিকর খাদ্যের অভাবে ভুগছেন। সেখানে ভারতের এই পরিসংখ্যান রীতিমতো উদ্বেগজনক। কেননা, পরিসংখ্যানের হিসাবে আফ্রিকার কাছাকাছি রয়েছে ভারত।
রাষ্ট্রসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (FAO) তথ্য অনুসারে, ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩০৭ কোটি মানুষের সুষম খাবার জোগাড়ের সামর্থ্য ছিল না। সেখানে, বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশের আবাসস্থল ভারতে ৯৭ কোটি মানুষ পুষ্টিকর খাদ্য জোগাড়ের সামর্থ্য হারিয়েছে।
FAO-এর ডিরেক্টর জেনারেল কু ডংইউ (Qu Dongyu) জানান, ‘মহামারী করোনাকালে মূল্যস্ফীতির জেরে বিশ্বে নতুন করে ১১২ কোটি মানুষ সুষম খাদ্য জোগাড়ের সামর্থ্য হারিয়েছে।’
মূলত, যে খাদ্যে খাদ্য উপাদানের ছটি উপাদান - কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন, খনিজ লবণ ও জল - গুণাগুণ অনুসারে উপযুক্ত পরিমাণে থাকে এবং যে খাদ্য গ্রহণে দেহের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতার জন্য উপযুক্ত পরিমাণ ক্যালোরি পাওয়া যায়, তাকে সুষম খাদ্য বলে। তবে, রিপোর্টে সুষম খাদ্যের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে FAO জানিয়েছে, ন্যূনতম প্রক্রিয়াজাত খাবার - যেমন গোটা শস্য, বাদাম, লেবু, ফল ও শাকসবজি এবং প্রাণিজ প্রোটিন রয়েছে এমন খাদ্যকে সুষম খাদ্য হিসাবে ধরা হয়।
রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ৪২ শতাংশ মানুষ স্বাস্থ্যকর খাবার থেকে বঞ্চিত। দেশের নিরিখে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা নেপালের। সে দেশের ৮৪ শতাংশ মানুষ স্বাস্থ্যকর খাবার জোগাড় করতে অপরাগ। এর পরে রয়েছে পাকিস্তান (৮৩.৫ শতাংশ), আফ্রিকা (৮০ শতাংশ), বাংলাদেশ (৭৩.৫ শতাংশ) এবং ভারত (৭০.৫ শতাংশ)। অন্যদিকে, চীনে১২ শতাংশ, ব্রাজিলে ১৯ শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কার ৪৯ শতাংশ মানুষ সুষম খাদ্যের অভাবে ভুগেছেন।
উল্লেখ্য, দেশের প্রায় ৮০ কোটি মানুষ বা প্রায় ৬০ শতাংশ ভারতীয় খাবারের জন্য সরকার প্রদত্ত ভর্তুকিযুক্ত রেশনের উপর নির্ভরশীল। প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ অন্ন যোজনার অধীনে মহামারী করোনাকালে বিনামূল্যে পাঁচ কেজি খাদ্য শস্যের একটি বিশেষ সহায়তা ছাড়াও উপভোক্তারা প্রতি মাসে পাঁচ কিলোগ্রাম চাল-ডাল ইত্যাদি পান মাত্র ২-৩ টাকায়।
রাষ্ট্রসংঘের এই রিপোর্টের প্রেক্ষিতে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের মত, মানুষকে পর্যাপ্ত পুষ্টিসম্পন্ন খাবার যে দেওয়া হচ্ছে না, তারই প্রমাণ এই তথ্য।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন