১৫ আগস্ট, লালকেল্লায় দাঁড়িয়ে দেশবাসীকে ‘স্বজনপোষণ’-এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর ডাক দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi)। এবার, মোদীর সেই ডাককেই কটাক্ষ করে কেন্দ্রকে বিঁধেছেন সিপিআইএম-এর সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি (Sitaram Yechchuri)।
ট্যুইটে এক সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের ‘ক্লিপিং’ শেয়ার করে ইয়েচুরি জানান, ‘স্বজনপোষণ? বন্ধুদের জন্য ১০ লক্ষ কোটির বেশি ঋণ মকুব?’ আর যে রিপোর্ট তিনি পোস্ট করেছেন, তাতে লেখা আছে, ‘গত ১০ বছরে ১১.৬৮ লক্ষ কোটি টাকা অনাদায়ী ঋণ খাতা থেকে মুছে দিয়েছে সরকার। ২০২০-২১ অর্থ বছরে ২.০২ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ মকুব করা হয়েছে। আর গত সাত বছরে ১০.৭ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ মকুব করেছে কেন্দ্র।’
যদিও, ইয়েচুরির টুইটারে ২০২১-২২ অর্থ বর্ষে ঋণ মকুবের হিসাব নেই। সূত্রের খবর, গত ১০ আগস্ট, সংসদের বাদল অধিবেশনে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ভাগবত কে. কারাদে জানান, ২০২১-২২ আর্থিক বছরে মকুব করা হয়েছে ১.৫৭ লক্ষ কোটি টাকা।
প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ এই অর্থ ঋণ মকুব বা অনাদায়ী ঋণ হিসাবের খাতা থেকে মুছে ফেলা নিয়ে বরাবরই কেন্দ্রকে বিঁধেছেন সিপিআইএম-এর সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। ব্যাঙ্ক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে পলাতক গুজরাট ব্যবসায়ী নীরব মোদী, মেহুল চোকসিদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়ায়, নরেন্দ্র মোদী সরকারের সমালোচনা করেছেন ইয়েচুরি।
কিন্তু, সোমবার, স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে, সেই নরেন্দ্র মোদী সরকার যখন বিরোধীদের নিশানা করে ‘স্বজনপোষণ’-এর অভিযোগ আনেন; তখনই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে।
মোদীর এই বক্তব্যের ৪ দিন পূর্বেই সংসদে রাজ্যসভায় অর্থ প্রতিমন্ত্রী ভাগবত কে. কারাদের লিখিত উত্তরে জানান, দেশের ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ২.৩৪ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ মকুব করা হয়েছে। ২০১৮-১৯ সালে ঋণ মকুব করা হয়েছে ২.৩৬ লক্ষ কোটি টাকা। এবং ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে মকুব করা হয় ১.৬১ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ মকুব করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ২০২০-২১ সালে সর্বোচ্চ ২,৮৪০ জন ব্যবসায়ী ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণ খেলাপি করেছেন।
অন্যদিকে, সাধারণ মানুষের ট্যাক্সের টাকা মূলধন হিসাবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে জোগান দিচ্ছে কেন্দ্র। যার বেশিরভাগই অর্থ চলে যাচ্ছে কর্পোরেটদের ঋণ মকুবের ক্ষেত্রে।
তথ্য জানার অধিকার আইন জানা যাচ্ছে, দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে মোদী সরকার যে পরিমাণ মূলধন জোগান দিচ্ছে, তার তিনগুন অর্থ চলে যাচ্ছে কর্পোরেটদের ঋণ মকুবের ক্ষেত্রে। কর্পোরেটকে একপ্রকার ভর্তুকি বিলি করা হচ্ছে। ফলে, দেশের অর্থ ব্যবস্থার সঙ্গে ব্যাংঙ্কিং ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে।
২০২০-২১ অর্থ বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে মূলধনের জোগান ছিল ১৪.৫ হাজার কোটি টাকা। একই সময় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে কর্পোরেট ঋণ মুকুব হয়েছে ২.০২ লক্ষ কোটি টাকা।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন