‘বর্ণবাদ’-এর বিরুদ্ধে একযোগে সরব হয়েছেন কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন ও তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন। সোমবার, কন্যাকুমারীতে এক অনুষ্ঠানে ‘বর্ণবাদ’ প্রথার সমর্থকদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে জনগণকে আহ্বান জানিয়েছেন দুই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। দুজনেই জানিয়েছেন, বর্ণবৈষম্য রুখতে ডানপন্থী শক্তিকে পরাজিত করতে হবে।
প্রায় ২০০ আগে (১৮০৩ সাল থেকে) কেরালার (তৎকালীন ত্রাভানকোর রাজ্য) নিম্নবর্ণের হিন্দু নারীদের স্তন সহ বুক ঢাকতে হলে দিতে হতো ‘স্তনকর’। স্থানীয় ভাষায় একে বলা হতো ‘মুলাককারাম’। মূলত নিম্নবর্ণের মানুষকে অসম্মানিত করতেই তখন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল উচ্চবর্ণের হিন্দুরা। নিম্নবর্ণের মানুষের বেশিরভাগের আয়ও ছিল অতি সামান্য। তাই কথিত আছে, স্তনকর দেওয়া সম্ভব হতো না তাদের পক্ষে। ফলে স্তন অনাবৃত রাখতে হতো তাদের।
বর্ণবাদী সেই সমাজে মনে করা হতো, পোশাক পরার অধিকার থাকবে শুধু ‘উচ্চবর্ণের’ মানুষের। শুধু তাই নয়, ওই সময় রাজ্যের নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার জন্য অলঙ্কার পরা এবং পুরুষের জন্য গোঁফ রাখার জন্যও কর দিতে হতো। উচ্চবর্ণের পুরুষদের সামনে নারীদের বুক খোলা রাখতে হতো। এটাকে দেখা হতো ভদ্রতার নির্দশন হিসেবে। পোশাক ছিল তখন ধনসম্পদ ও আভিজাত্যের প্রতীক।
তাছাড়া যেহেতু নিম্নবর্ণের মানুষ করের অর্থ পরিশোধ করতে পারতেন না, তাই তাদের অনেক বকেয়া পড়ে যেত। রাজার কাছে সব সময় ঋণ থাকতো। এভাবে আর্থিকভাবেও নিম্নবিত্তদের দমন করা হতো।
ধর্ম এবং উচ্চবর্ণের শাসকের- এই বর্ণবাদী প্রথার বিরুদ্ধে ১৮২৯ সালে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল নিম্নবর্ণের মানুষেরা। এই বিদ্রোহের নাম দেওয়া হয়েছিল- ‘চান্নার রিভল্ট’।
সেই বিদ্রোহের ২০০ বছর পালন করতে- সোমবার এক জায়গায় মিলিত হয়েছিলেন বিজয়ন ও স্ট্যালিন। সম্প্রতি, সনাতন ধর্ম রক্ষার ডাক দিয়েছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ (RSS)। তবে স্ট্যালিন ও বিজয়ন দুজনেই RSS-কে বর্ণবাদী শক্তি হিসাবেই উল্লেখ করেছেন। সমাজে বিভাজনকারী শক্তির (RSS-এর) বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জনগণকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন দুজনেই।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন