করোনা অতিমারিতে ভারতের কমপক্ষে আরও ৫.৬ কোটি মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে নেমে গেছেন। দারিদ্র্য নিয়ে বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত নতুন এক রিপোর্টে চাঞ্চল্যকর এই দাবি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার 'পভার্টি অ্যান্ড শেয়ার্ড প্রসপারিটি ২০২২' শীর্ষক একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে বিশ্ব ব্যাংক। ভারতীয় সংস্থা সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি (CMIE)-র দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই রিপোর্ট তৈরী করেছে বিশ্ব ব্যাংক। রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২০ সালে ভারতে কমপক্ষে ৫.৬ কোটি মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে তলিয়ে গেছেন। বিশ্ব ব্যাংক জানিয়েছে, ২০১১ সালের পর ভারত সরকার দারিদ্র্য নিয়ে কোনও রিপোর্ট প্রকাশ করেনি। তাই CMIE-এর সমীক্ষার ভিত্তিতে এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। উল্লেখ্য, CMIE বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই সমীক্ষার তথ্য সংগ্রহ করেছে।
বিশ্ব ব্যাংক তার আগের এক রিপোর্টে জানিয়েছিল, ২০১৭ সালে ভারতে দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ছিল ১০.৪ শতাংশ, যাঁদের দৈনিক আয় ১৫৫ টাকা। পরে সংশোধিত রিপোর্টে জানা যায়, ওই বছর আসলে ১৩.৬ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে ছিলেন। ২০১৯-২০ সালের রিপোর্টে সেই সংখ্যা কিছুটা কমেছে। বর্তমান রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২০ সালে ভারতের ১০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, যদিও বর্তমানে আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য সীমার নিয়মও পরিবর্তন হয়েছে। আগে যা ছিল দৈনিক ১৫৫ টাকা, এখন তা বেড়ে হয়েছে ১৭৫.৫০ টাকা। সেই হিসেবে দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা কমেছে।
অন্যদিকে, বিশ্ব ব্যাংক ছাড়াও আর এক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল মনিটরি ফান্ড বা IMF-ও দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা নিয়ে সম্প্রতি একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ভারতে ২০২০ সালের পর নতুন করে ২.৩ কোটি মানুষ দারিদ্র্যের সম্মুখীন হয়েছেন। এই গবেষণা পত্রটি প্রকাশ করেছেন মোদী ঘনিষ্ঠ অর্থনীতিবিদ সুরজিৎ ভাল্লা, করণ ভাসিন এবং অরবিন্দ ভিরমানি। সুরজিৎ ভাল্লা প্রধানমন্ত্রী মোদীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। ২০১৮ সালে এই সদস্য পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে আইএমএফের ভারতের কার্যকারী অধিকর্তা হন তিনি।
ভারতে চরম দারিদ্র্যে তলিয়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যা নিয়ে দুই আর্থিক সংস্থার দুই রকম রিপোর্ট নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠছে। তবে CMIE-এর তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা বিশ্ব ব্যাংকের রিপোর্টকেই মান্যতা দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। IMF-এর রিপোর্টে ভারতের দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা কম দেখানোর পেছনে বিশেষ উদ্দেশ্য রয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন