ভারত জোড়ো যাত্রার দ্বিতীয় ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রার সূচনা হল রবিবার। এদিন মণিপুরের থৌবাল জেলা থেকে ৬৬ দিনের যাত্রা শুরু হয়েছে। কংগ্রেসের ডাকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন ১০ বছরের শাসনকে "অন্যায় কাল" (অন্যায়ের সময়) হিসাবে অভিহিত করে এদিনের যাত্রা শুরু হয়।
১৫টি রাজ্যের মধ্য দিয়ে ৬,৭১৩ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে ২০ মার্চ মুম্বাইয়ে এই যাত্রা শেষ হবে।
এদিন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে থৌবাল জেলার খংজোম যুদ্ধ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের পরে যাত্রা যাত্রা শুরু করেন। ১৮৯১ সালে শেষ অ্যাংলো-মণিপুর যুদ্ধে নিহতদের স্মরণে এই সৌধ নির্মিত হয়েছিল।
মণিপুর ছাড়াও (এক দিনে ১০৭ কিমি) এই যাত্রা, বাস এবং পদযাত্রা সহ - চারটি উত্তর-পূর্ব রাজ্যের মধ্যে দিয়ে যাবে। নাগাল্যান্ডে দু’দিনে ২৫৭ কিমি, অরুণাচল প্রদেশে ১ দিনে ৫৫ কিমি, মেঘালয়ে ১ দিনে ৫ কিমি এবং আসামে ৮ দিনে ৮৩৩ কিমি পথ অতিক্রম করবে এই যাত্রা।
যাত্রা শুরুর আগে, একটি বিশাল সমাবেশে ভাষণ দিয়ে, প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী বলেন, আট মাস ধরে দীর্ঘ জাতিগত দাঙ্গায় মহিলা এবং শিশু সহ বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ মারা গেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মণিপুরের জন্য সময় হয়নি।
রাহুল গান্ধী আরও বলেন, "আমরা বেদনা, দুঃখ এবং ক্ষতির কথা বুঝতে পারি। আমরা মণিপুরে সম্প্রীতি, শান্তি এবং ভালোবাসা ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।"
তিনি বলেন, গত বছরের জুন মাসে মণিপুরে তাঁর আগের সফরের সময় এসে যা দেখেছিলেন, ২০০৪ সালে রাজনীতিতে যোগদানের পর থেকে তিনি এই রাজ্যে এত ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি কখনও দেখেননি।
রাহুল গান্ধী বলেন, "আমাদের আগের কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর ভারত জোড়ো যাত্রায় (সেপ্টেম্বর ২০২২ থেকে ৩০ জানুয়ারী ২০২৩) আমরা ব্যাপক সাড়া পেয়েছি এবং লক্ষাধিক মানুষের সাথে যোগাযোগ করেছি।"
তিনি বলেন, গত যাত্রার সময়, কংগ্রেস সর্বস্তরের মানুষের কথা শুনেছিল এবং আবারও জনগণের 'মন-কী-বাত' শুনতে আগ্রহী। বিজেপি-আরএসএস তাদের রাজনৈতিক প্রচারের মাধ্যমে তাদের ঘৃণা ছড়াচ্ছে। দেশ এখন এক বড় রাজনৈতিক অবিচারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, অর্থনীতিতে একচেটিয়াকরণ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে ধ্বংস করছে এই সরকার।
রাহুল বলেন, "অনগ্রসর মানুষ, দলিত এবং আদিবাসীদের এখনকার শাসনে কোন ভূমিকা নেই।” তিনি বলেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে এই লড়াই জারি থাকবে।
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে তাঁর বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী মোদীর সমালোচনা করে বলেন, ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির নামে তিনি এখন 'রাম নম' জপ করছেন এবং সর্বত্র ঘুরে বেড়াচ্ছেন কিন্তু মণিপুরে বিধ্বস্ত হিংসার ঘটনা থেকে তিনি নিজেকে দূরে রেখেছেন।
খাড়গে বলেন, “২০১৯ সালের নির্বাচনের আগে বিজেপি প্রতি বছর দুই কোটি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল... চাকরি কোথায়... সব শ্রেণীর মানুষের সাথে অবিচার করা হয়েছে। ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রার মাধ্যমে, আমরা - দলিত, আদিবাসী, মহিলা, যুবক - প্রত্যেকের কাছে ন্যায়বিচার ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।”
তিনি আরও বলেন, প্রাক্তন কংগ্রেস প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু, ইন্দিরা গান্ধী এবং রাজীব গান্ধীর শাসনকালে উত্তর-পূর্বের ছয়টি রাজ্য - মণিপুর, ত্রিপুরা, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম এবং অরুণাচল প্রদেশ - তাদের রাজ্যের মর্যাদা পেয়েছিল এবং ওই সময় সব ধরণের উন্নয়ন করা হয়েছিল।
কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া; রাজস্থানের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট এবং শচীন পাইলট; কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ, পবন খেরা, প্রমোদ তিওয়ারি, গৌরব গগৈ, সালমান খুরশিদ, দিগ্বিজয় সিং, অভিষেক মনু সিংভি, কার্তি চিদাম্বরম সহ অন্যান্য নেতারা এদিনের যাত্রায় অংশ নেন।
বিএসপি থেকে বরখাস্ত লোকসভা সাংসদ দানিশ আলি, ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বাধীন ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রায় যোগ দেবেন। এদিনের যাত্রায় তিনিও যোগ দিয়েছেন।
এটি ১৫টি রাজ্যের ১০০টি সংসদীয় নির্বাচনী এলাকার ১১০টি জেলার মধ্যে দিয়ে এই যাত্রা যাবে এবং শেষ হবে আগামী ২০ মার্চ।
যাত্রা চলাকালীন রাহুল গান্ধী ছোট জনসমাবেশে ভাষণ দেবেন এবং সাধারণ মানুষ, সুশীল সমাজের সদস্য এবং বিভিন্ন সংস্থার সাথে মতবিনিময় করবেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন