আয়ের টাকা আর থাকছে না নিজেদের কাছে। সবই চলে যাচ্ছে পুঁজিপতিদের ঋণ দিতে বা তাঁদের ঋণখেলাপির দায় মেটাতে। আর তা হচ্ছে কেন্দ্রের নির্দেশিকা মেনে। ফলে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি নিজেদের পরিকাঠামোর উন্নতি করছে পারছে না।
এ নিয়ে দেশের বৃহত্তম ব্যাঙ্ক ইউনিয়ন 'অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন' (AIBEA)- এর সাধারণ সম্পাদক সি ভেঙ্কটাচালম (C Ventakchalam) জানান, 'রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের অর্জিত মুনাফার ৬৮ শতাংশ চলে যাচ্ছে ঋণখেলাপি ব্যাবসায়ীদের দায়মুক্তির জন্য।'
বেশিরভাগ পুঁজিপতিই নিজেদের ব্যবসা বৃদ্ধির জন্য ব্যাঙ্ক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ঋণ হিসাবে নেন। আদতে যে ঋণের টাকা সাধারণ মানুষের। কিন্তু, ব্যবসায় লোকসান দেখিয়ে সেই টাকা বা ঋণ মেটাতে চান না পুঁজিপতি ব্যবসায়ীরা। সরকারও এ ক্ষেত্রে ছাড় দেয়। ফলে, সাধারণ মানুষকে তাঁদের টাকা ফিরিয়ে দিতে গিয়ে ব্যাঙ্কগুলিকে নিজেদের লাভের টাকা খরচ করতে হয়।
তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভেঙ্কটাচালম। তিনি জানান, 'ব্যাঙ্কের লাভের সিংহভাগ অর্থই চলে যাচ্ছে ঋণখেলাপি পুঁজিপতিদের দায়মুক্তির জন্য। এইভাবেই তাঁরা জনগণের টাকা লুট করছে।'
ভেঙ্কটাচালম জানান, ২০২১-২২ অর্থবর্ষে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির মোট লাভের পরিমাণ ছিল ২ লক্ষ ৮ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা। কিন্তু, ঋণখেলাপি ব্যাবসায়ীদের দায়মুক্তির জন্য খরচ হয়েছে ৬৬ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা।
গত বছর মোদী সরকার ব্যাঙ্কিং সেক্টরে সংস্কারের ঘোষণা দেন। জানান, লোকসানে থাকা সরকারি ব্যাঙ্কগুলিকে বেসরকারীকরণ করা হবে। কিন্তু, দেখা যাচ্ছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির আর্থিক শ্রীবৃদ্ধির অন্যতম অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে - পুঁজিপতিদের ঋণ ব্যবস্থা।
শুধু তাই নয়, ব্যাঙ্কের সংযুক্তিকরণের পরও এই অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। উল্টে, কাজ হারিয়েছেন বহু ব্যাঙ্ক কর্মী। দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সংখ্যা ২৭ থেকে ১২ নামিয়ে আনায় বিপুল পরিমাণ কর্মী ছাঁটাই হয়েছে। জানা যাচ্ছে, সারাদেশে ব্যাঙ্কগুলির মোট ব্রাঞ্চ সংখ্যা কমেছে ২ হাজার ৪৪ টি। এর জেরে ছাঁটাই হয়েছে ১৩ হাজার ব্যাঙ্ক কর্মী।
অন্যদিকে, ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে বেসরকারী ব্যাঙ্কগুলির শাখার সংখ্যা ৪ হাজার ২৩ থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৪ হাজার ৩৪২ টি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন