৭৮ জন তীর্থযাত্রীর মৃত্যুতে কার্যত উদ্বেগজনক অবস্থায় উত্তরাখন্ড। চারধাম যাত্রার পথে ভয়াবহ বিপর্যয়ের ফলে প্রাণ হারালেন বহু মানুষ।
ধর্মীয় পর্যটন কেন্দ্রগুলির মধ্যে দেশের মধ্যে অন্যতম হল উত্তরাখন্ড। নানা ধরণের তীর্থস্থান থাকার ফলে সারাদেশ থেকে প্রতিবছর অসংখ্য মানুষ তীর্থ করতে এখানে আসেন। এ বছর চারধাম যাত্রা শুরু হয়েছিল ৩ মার্চ থেকে। আর তারই মধ্যে ঘটল ভয়াবহ দুর্ঘটনা। বিশ্বজোড়া কোভিড সংকটের জেরে টানা ২ বছর ধরে বন্ধ ছিল তীর্থযাত্রা। যার ফলে এই বছর তীর্থযাত্রীদের ভিড় ছিল উপচে পড়ার মত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হৃদযন্ত্রের সমস্যার কারণে উত্তরাখণ্ডের উচ্চ উচ্চতার মন্দিরে যাওয়ার পথে প্রতি বছরই বেশকিছু তীর্থযাত্রীর মৃত্যু ঘটে। গত ৩ মে যমুনোত্রী এবং গঙ্গোত্রী মন্দির খোলার সাথে যাত্রা শুরু হয় যাত্রা। বিগত বছরগুলির তুলনায় এ বছর তীর্থে যাওয়ার হিড়িক অনেক বেশি।
পূর্ববর্তী বছরগুলিতে তীর্থযাত্রীদের মৃত্যুতালিকা অনুযায়ী, প্রতি বছর এপ্রিল-মে থেকে অক্টোবর-নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় ছয় মাস স্থায়ী মরসুমের মধ্যে ২০১৯ সালে ৯০টিরও বেশি, ২০১৮ সালে ১০২ এবং ২০১৭ সালে ১১২ জন চারধাম যাত্রী মারা গিয়েছিলেন।
কেদারনাথে বিনামূল্যে চিকিৎসা সুবিধা প্রদানকারী সিক্স সিগমা হেলথকেয়ারের প্রধান প্রদীপ ভরদ্বাজ বহু সংখ্যক তীর্থযাত্রীর মৃত্যুর কারণ প্রসঙ্গে বলেছেন, ব্যাপক মাত্রায় ভিড়, কোভিড-পরবর্তী সময়কালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হওয়ায়, অনিশ্চিত আবহাওয়া এবং অপর্যাপ্ত ব্যবস্থার কারণেই মূলত এত বেশি পরিমাণে মৃত্যু ঘটছে তীর্থযাত্রীদের।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও জানান, অধিকাংশ তীর্থযাত্রী যেহেতু পাহাড়ের উচ্চতায় উঠতে অভ্যস্ত নন তাই যাত্রাপথের মাঝে বিশ্রামের ব্যবস্থা রাখা উচিত। যাতে তারা উচ্চ উচ্চতায় যে ধরনের আবহাওয়ার মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন তার সাথে নিজেদেরকে মানিয়ে নিতে পারেন।
সাধারণত, নিম্ন উচ্চতা থেকে ১০-১২ হাজার ফুট উচ্চতায় হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত মন্দিরগুলিতে আকস্মিক জলবায়ু পরিবর্তন হয়। যেটা অধিকাংশ তীর্থযাত্রী মানিয়ে নিতে অক্ষম।
এ প্রসঙ্গে ভরদ্বাজ আরও জানান, কেদারনাথের আবহাওয়া প্রায়ই বিকেলের দিকে খারাপ হয়ে যায়। একটি রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে কিছুক্ষণের মধ্যেই বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টির পাশাপাশি আকাশ মেঘলাা হয়ে যায়। কেদারনাথের ৩ কিমি ব্যাসার্ধের মধ্যে কোনও আশ্রয়স্থল না থাকায়, তীর্থযাত্রীরা প্রায়ই ভিজে যান এবং অবশেষে হাইপোথার্মিয়ায় আক্রান্ত হন। তাঁর মতে, কেদারনাথ যাত্রার পথে আরও বেশি সংখ্যক কমিউনিটি কিচেনের ব্যবস্থা রাখা উচিত। কারণ, এখনও অবধি ৫০ হাজার তীর্থযাত্রীর জন্য মাত্র তিনটি কমিউনিটি কিচেন রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ইতিমধ্যেই যারা কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন সেইসকল তীর্থযাত্রীদের মৃত্যুর সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। তাই এই কঠিন যাত্রা শুরু করার আগে অবশ্যই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা আবশ্যক।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন