বুধবার অন্ধ্রপ্রদেশ বোর্ড অফ ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। এরপর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ৯ জন ছাত্রছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। আরও দুই পড়ুয়া আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। এই মুহূর্তে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে তারা। সকলেই পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার জন্য এই চরম পথ বেছে নিয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে রিপোর্টে।
একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় প্রায় ১০ লাখ ছাত্র ছাত্রী অংশগ্রহণ করেছিল। একাদশ শ্রেণিতে পাশের হার ৬১ শতাংশ এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ৭২ শতাংশ।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার শ্রীকাকুলাম জেলায় ১৭ বছর বয়সী একটি ছেলে ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। জেলার ডান্ডু গোপালপুরম গ্রামের বাসিন্দা ওই কিশোর ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিল। বেশিরভাগ বিশয়েই ফেল করার পরে হতাশ হয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে।
বিশাখাপত্তনম জেলার মালকাপুরম থানার ত্রিনাধাপুরমে ১৬ বছর বয়সী একটি মেয়ে নিজের বাড়িতেই আত্মহত্যা করেছে। সেও ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিল এবং বেশ কয়েকটি বিষয়ে ফেল করেছে।
বিশাখাপত্তনমেরই কাঞ্চরাপালেম এলাকায় নিজের বাড়ি থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ১৮ বছর বয়সী আর এক কিশরকে। সে ইন্টারমিডিয়েট দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল এবং একটি বিষয়ে ফেল করেছিল।
চিত্তুর জেলাতেও দুই জন পড়ুয়া আত্মহত্যা করেছে। দুজনই ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বর্ষের পড়ুয়া। এক ছাত্রী নদীতে ঝাঁপ দিয়ে এবং এক ছাত্র কীটনাশক খেয়ে নিজেকে শেষ করেছে।
আনাকাপল্লীতে নিজের বাড়িতেই ১৭ বছর বয়সী ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বর্ষের আরেক ছাত্র ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে।
এই মর্মান্তিক ঘটনায় স্তব্ধ অন্ধ্রপ্রদেশবাসী। সম্প্রতি পড়াশোনার চাপ সহ্য করতে না পেরে দেশজুড়ে একাধিক আত্মহত্যার খবর প্রকাশ্যে এসেছে। চলতি বছর আইআইটি-র চার পড়ুয়ার আত্মহত্যার খবর সামনে এসেছে। কোটায় কোচিং নেওয়া একাধিক পড়ুয়া চাপ সহ্য করতে না পেরে চরম সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ভারতের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় ফেব্রুয়ারিতে ছাত্রদের এই আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। প্রতিষ্ঠান বা অভিভাবকদের কোথাও ভুল হচ্ছে কিনা ভাবতে বলেছিলেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত বুধবার আত্মহত্যার মতো সিরিয়াস বিষয় নিয়ে মজা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এক টেলিভিশন চ্যানেলের অনুষ্ঠানে মোদী বলেন, এক অধ্যাপকের মেয়ে সুইসাইড নোট লিখে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। সেই নোট যখন অধ্যাপক বাবার চোখে পড়ল, তিনি বানান ভুল ধরতে ব্যস্ত রইলেন।
প্রধানমন্ত্রীর এই মজার তীব্র সমালোচনা করেছেন বিরোধী নেতারা। প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী টুইটারে লেখেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আত্মহত্যা নিয়ে রসিকতা করেছেন। আত্মহত্যার বিষয়ে কেউ কীভাবে এতটা অসংবেদনশীল হতে পারে? সরকারী পরিসংখ্যান দেখায় যে ২০২১ সালে ১.৬৪ লক্ষেরও বেশি ভারতীয় আত্মহত্যা করে মারা গেছেন। আমাদের দেশে প্রতিদিন ৪৫০ জন মানুষ আত্মহত্যা করে মারা যাচ্ছে, আর এটি প্রধানমন্ত্রীর জন্য একটি 'হাসি ঠাট্টার' হয়ে দাঁড়িয়েছে!’
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন