সম্প্রতি গুজরাটের মোরবি (Gujarat's Morbi) সেতু বিপর্যয়ের ঘটনায় উদ্বিগ্ন সারা দেশ। কারণ, শতাব্দী প্রাচীন এই সেতু দুর্ঘটনায় ১৩৫ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। কিন্তু এই ধরণের মর্মান্তিক ঘটনা আগেও ঘটেছে।
২০০৬ সালের ‘অক্টোবর’ মাসে, মধ্যপ্রদেশের দাতিয়া জেলায় (Madhya Pradesh's Datiya District) আগাম কোনও সতর্কতা না দিয়ে মাদিখেদা বাঁধের গেট খুলে দেওয়া হয়েছিল। যার জেরে, সিন্ধ নদী হঠাৎ প্লাবিত হয়ে প্রাণ হারান ৫৭ জন মানুষ।
রিপোর্ট অনুসারে জানা যাচ্ছে, দাতিয়া জেলায় এক মন্দিরে প্রার্থনা করতে জড়ো হয়েছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। এসময় হঠাৎ সিন্ধ নদী প্লাবিত হয়। যার ফলে এই নদীর উপর একটি সেতু ভেঙে পড়ে। সরকারি তথ্য অনুসারে, এই ঘটনায় কমপক্ষে ৫৭ জন মানুষ জলের প্লাবনে ভেসে যায়।
এই রেশ না কাটতেই- ২০১৩ সালের ‘অক্টোবর’-এ আরও একটি ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে দাতিয়াতে। পদপিষ্ট হয়ে প্রাণ হারায় শিশু ও মহিলা সহ ১১৫ জন মানুষ। কাকতালীয়ভাবে দুটি ঘটনাই ঘটেছে ‘অক্টোবর’ মাসে। আবার, সেই ‘অক্টোবর’ মাসেই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে মোরবিতে।
উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে দাতিয়ায় প্রথম ঘটনার পর ১২ বছর কেটে গেছে এবং ২০১৩ সালের পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনার পর প্রায় নয় বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু, অনেক দাবি জানানো সত্ত্বেও এই দুটি মামলায় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
দুটি দুর্ঘটনাই ঘটেছে বিজেপি ক্ষমতায় থাকাকালীন (BJP Govt.)। পরে, ঘটনার তদন্তের জন্য হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের নেতৃত্বে তদন্ত কমিশন গঠন করেছিল তদানীন্তন মধ্যপ্রদেশ সরকার।
তবে, দুটি ক্ষেত্রেই কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনা হয়নি, এবং কোনো কর্মকর্তাকে শাস্তি দেওয়া হয়নি। এই ঘটনাগুলিকে ‘সরকার অনুমোদিত হত্যাকাণ্ড' বলে অভিহিত করেছেন সাধারণ মানুষ (স্থানীয়েরা)।
মজার বিষয় হল, ২০১৮ সালে মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পরেও, এই কাণ্ডের জন্য কোনও কর্মকর্তাকে দায়ী করা হয়নি।
বিশেষ সূত্রে খবর, ২০০৬ সালের ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট বিধানসভায় জমা দিয়েছে রাজ্য সরকার-নিযুক্ত তদন্ত কমিটি। কিন্তু, কমিটির সেই রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করেছে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার।
অজয় দুবে (Ajay Dube) নামে এক সামাজ কর্মী জানান, ‘২০১৩ সালের পদপিষ্টের ঘটনার তদন্ত এবং দোষী কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করতে- মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রাকেশ সাক্সেনা (Justice Rakesh Saxena)-কে নিয়োগ দিয়েছিল শিবরাজ সিং চৌহান সরকার (Shivraj Singh Chouhan Govt.)। কিন্তু, তারপরে আর কিছুই হয়নি।’
একটি সূত্র IANS-কে জানিয়েছে, ২০১৪ সালের মার্চ-এপ্রিল নাদাগ নিজেদের তদন্ত রিপোর্ট সরকারের কাছে জমা দিয়েছে বিচারপতি সাক্সেনার নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটি। কিন্তু, ওই পজন্তই। তদন্ত রিপোর্টে কি আছে- তা জনসমক্ষে আনা হয়নি। এমনকি, তা রাজ্য বিধানসভাতেও পেশ করা হয়নি।
সমাজকর্মী দুবে জানিয়েছেন, তিনি উল্লিখিত তদন্ত রিপোর্টের অনুলিপি পেতে RTI দায়ের করেছিলেন। কিন্তু, রাজ্য সরকারের ‘ক্রমাগত চাপের’ কারণে তিনি রিপোর্টটি পেতে ব্যর্থ হন। তাঁরা (সরকার) এটি আটকে রাখতে সফল হয়েছে।
দুবে জানান, রাজ্য সরকার যদি সময়মতো পদক্ষেপ নিত, তাহলে ২০১৩ সালের পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা এড়ানো যেত।
সমাজকর্মী দুবের মতে, ‘এই ধরনের কমিশনের কাজ হল- ভুল-ত্রুটি চিহ্নিত করার পাশাপাশি, এই ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত সেই পরামর্শ দেওয়া। আর, এই কাণ্ডে দোষী কর্মকর্তাদের যদি আইনের আওতায় আনা হতো- তাহলে ২০১৩ সালের ঘটনা এড়ানো যেত। এক্ষেত্রে কর্মকর্তারা আরও সতর্ক হতেন। তবে, সবই এখন বিস্মৃত ট্র্যাজেডি।’
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন