মণিপুরের নৃশংস ঘটনার প্রতিবাদে দ্য ইন্ডিজিনিয়াস ট্রাইবাল লিডারস ফোরাম (আইটিএলএফ)-এর ডাকে চুরাচন্দ্রপুরে এক বিশাল মিছিলে সামিল হলেন স্থানীয় জনতা। বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষ এদিনের মিছিলে যোগ দেন। গত ৪ঠা মে দুই মহিলাকে প্রকাশ্যে নগ্ন করে প্যারেড করানোর ভিডিও গতকালই ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এরপরেই ৭৭ দিনের পুরোনো এই ঘটনার প্রতিবাদে দেশজুড়ে সরব হন সমাজের সর্ব স্তরের মানুষ।
বুধবার রাত থেকে সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ওই নৃশংস হিংসার ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে একদল উন্মত্ত জনতা টেনে হিঁচড়ে দুই নগ্ন মহিলাকে খোলা মাঠের মধ্যে নিয়ে যাচ্ছে। ওই ভিডিওর ঘটনাটি গত ৪ মে মণিপুরের রাজধানী ইম্ফল থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরে কাংপকপি জেলায় ঘটেছে বলে দাবি করেছে মণিপুরের উপজাতি সংগঠন আইটিএলএফ। পাশাপাশি, ওই উপজাতি সংগঠনেরই অভিযোগ যে ভিডিওতে থাকা দুই নগ্ন মহিলাকে মারধর ও গণধর্ষণও করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সাত-সকালেই টুইটারে এই ঘটনার নিন্দা করে মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন. বীরেন সিং জানিয়েছেন, “যে দুই মহিলা ওই ধরণের অসম্মানজনক ও অমানবিক নৃশংসতার শিকার হয়েছেন, তাঁদের জন্য আমার হৃদয় ব্যথিত। কোনও অভিযুক্ত ছাড় পাবেনা। পুলিশ ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এবং আজ সকালে প্রথম অভিযুক্তকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। সবাইকে জানিয়ে দিতে চাই, আমাদের সমাজে এই ধরণের জঘন্য কাজের জন্য কোনও জায়গা নেই।”
যদিও, দুইমাস আগে এই ঘটনার ঠিক পরেই অভিযোগ জানিয়ে এফআইআর দায়ের করা হলেও পুলিশ কোনও পদক্ষেপই নেয়নি। বুধবার এই নৃশংস ঘটনার ভিডিও সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই হঠাৎ করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে মণিপুর পুলিশ।
অন্যদিকে, প্রায় ২ মাসেরও বেশি সময় ধরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে অশান্ত মণিপুর নিয়ে এতদিন কোনও মন্তব্য করেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৃহস্পতিবার ওই ভিডিও সামনে আসতেই মুখ খোলেন নরেন্দ্র মোদীও। গোটা ঘটনাকে ‘লজ্জাজনক’ বলে তিনি জানিয়েছেন, “মণিপুরের যে ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে যে কোনও সভ্য সমাজের কাছে তা লজ্জাজনক। গোটা দেশের সম্মানহানি হয়েছে। ১৪০ কোটি মানুষের মাথা হেঁট হয়ে গেছে।”
মণিপুরের ঘটনায় সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালতও। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এদিন জানিয়েছেন, “গতকাল থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভিডিওগুলি নিয়ে আমরা খুব গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা আমাদের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এসে গেছে। এই ঘটনা কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন