সম্প্রতি সমাজকর্মী হিমাংশু কুমারকে 'দৃষ্টান্তমূলক' ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করেছে সুপ্রিম কোর্ট। শুধু তাই নয়, ছত্তিশগড়ের আদিবাসী গণহত্যার তদন্তের দাবি করায়, পিটিশনকারীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দাখিলের জন্য ছত্তিশগড় সরকারকে সুপারিশ করেছে শীর্ষ আদালত।
২২ জুলাই, নয়াদিল্লিতে এ নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন সমাজকর্মী হিমাংশু কুমার। সঙ্গে ছিলেন একাধিক সমাজকর্মী, লেখক এবং আইনজীবীরা। এই সাংবাদিক সম্মেলনে কুমার জানান, তিনি জেলে যেতে রাজি। তবে, আদালতের আদেশ মেনে তিনি জরিমানা দেবেন না।
এ দিনের সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ছত্তিশগড়ের সমাজকর্মী সোনি সোরি, লেখক ও কর্মী নন্দিনী সুন্দর এবং অরুন্ধতী রায়, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ এবং ভীম আর্মি নেতা চন্দ্রশেখর আজাদ। আদিবাসীদের জন্য ন্যায়বিচার চেয়ে আদালতের দারস্থ হওয়ায় সমাজকর্মী হিমাংশু কুমারকে যে জরিমানা করা হয়েছে, তাকে সম্পূর্ণ 'প্রহসন' বলে অভিহিত করেন তাঁরা।
পিটিশনে সমাজকর্মী হিমাংশু কুমার জানিয়েছিলেন, ২০০৯ সালে গোমপাডে ১৬ জন আদিবাসীকে হত্যা করেছে পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনী। নিহতদের মধ্যে ছিল মহিলা, শিশু এবং বয়স্ক মানুষ। পুলিশের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও লুটপাট সহ নৃশংসতার জন্য ৫১৯ টি মামলায় পিটিশন দাখিল করেছিলেন সমাজকর্মী হিমাংশু কুমার।
জানা যাচ্ছে, ২০০৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর এবং ১ অক্টোবর ছত্তিশগড়ের সুকমা জেলার গছনপল্লী, গোমপদ এবং বেলপোচা গ্রামে গণহত্যা সংঘটিত হয়। ১২ বছরের এক কিশোরীসহ ১৭ জন আদিবাসীকে হত্যা করা হয়। আহত হন বহু গ্রামবাসী, জ্বালিয়ে দেওয়া হয় ঘরবাড়ী। সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে আদিবাসীদের ওপর হত্যালীলা চালানোর। সমাজকর্মী হিমাংশু কুমার ও গ্রামবাসীরা সরব হন। অভিযোগ করেন সশস্ত্র বাহিনীর হাতেই খুন হয়েছেন আদিবাসীরা।
এই ঘটনার পরে আদালতের দ্বারস্থ হন সমাজকর্মী হিমাংশু কুমার। অদ্ভুতভাবে এই মৃত্যুর তদন্তের জন্য হিমাংশু কুমারের আবেদন গত ১৬ জুলাই, বৃহস্পতিবার খারিজ করে দিয়েছে শীর্ষ আদালত। একইসঙ্গে, হিমাংশু কুমারকে ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করেন বিচাপতি পারদিওয়ালা (Pardiwala) ও বিচারপতি এ. এম. খানউইলকর (A. M. Khanwilkar)-এর ডিভিশন বেঞ্চ। এ জন্য ৪ সপ্তাহের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে আদালত।
একইসঙ্গে, নির্দেশে বলা হয়েছে যে, যদি তিনি এই জরিমানার অর্থ জমা দিতে না পারেন সেক্ষেত্রে হিমাংশু কুমারের বিরুদ্ধে 'উপযুক্ত ব্যবস্থা' নিতে পারবে প্রশাসন। শুধু তাই নয়, সশস্ত্র বাহিনীর সম্মানহানি করতে ও অতিবাম উগ্রপন্থীদের সাহায্য করতে চেয়ে হিমাংশু কুমার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছেন কিনা সেবিষয়ে তদন্ত চালাতে, সিবিআই ও রাজ্য পুলিশকে নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
'আমি জানি আমার জেল হবে, কিন্তু জরিমানা দিলে এটা মেনে নেওয়া হবে যে আমি কিছু ভুল করেছিলাম', সাংবাদিক সম্মেলন বলেন হিমাংশু কুমার। এরপরেই তিনি বলেন, তিনি জেলে যেতে রাজি। তবে, আদলতের আদেশ মেনে তিনি জরিমানা দেবেন না।
এ দিন অভিযোগের সুরে সমাজকর্মী কুমার বলেন, 'আদিবাসী এলাকায় প্রচুর পরিমানে আধাসেনা মোতায়েন করা হয়েছে। কেন সেখানে তাঁরা জমায়েত করেছে? আসলে, আদিবাসীদের জমিতে দখল নিয়ে কর্পোরেটদের সাহায্য করার চক্রান্ত চলছে। ভারতের আদিবাসী এলাকায় পুরো যুদ্ধ চলছে। ভারতের নীরব যুদ্ধ! যে কারণে তাঁরা অস্ত্র, ধর্ষণ, লুট, সত্যকে আড়াল করার চেষ্টা করছে।
-With Inputs from Newsclick
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন