‘হিন্দু সমাজকে সামরিকীকরণ’ করার লক্ষ্য ছিল বিনায়ক দামোদর সাভারকরের। ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পের মাধ্যমে সাভারকরের সেই লক্ষ্য পূরণ করছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। একইসঙ্গে, প্রতিরক্ষা খাতে কর্পোরেশনগুলির উদ্দেশ্যও পূরণ করছে সরকার। শুক্রবার, দলের মুখপত্র ‘পিপলস ডেমোক্রেসি’-তে এই দাবি করেছে সিপিআই(এম)।
মুখপত্রের সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, ‘অগ্নিপথ প্রকল্পের মাধ্যমে সেনা নিয়োগের একটি গভীর উদ্দেশ্য রয়েছে। এই পরিকল্পনাটি সেনাবাহিনী এবং সমাজকে বিপদজনক পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাবে। হিন্দুত্বের আদলে ভারতীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে গড়ার বৃহত্তর যে পরিকল্পনা আছে, তার অঙ্গ হিসাবে অগ্নিপথ প্রকল্পকে দেখতে হবে। রাষ্ট্রের অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো সেনাবাহিনীকেও নিজেদের আদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গিতে গঠন করতে চাইছে হিন্দুত্ববাদী শাসকরা।’
সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ‘প্রতি বছর অস্ত্র প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কয়েক হাজার সেনা যখন ছাঁটাইয়ের জেরে সমাজে ফিরে আসবে, তা হিন্দু সমাজকে সামরিকীকরণের সাভারকরের লক্ষ্য পূরণের দিকে এগিয়ে যাবে।’
একইসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘যেভাবে চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ (CDS) পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে মানদণ্ডকে শিথিল করা হয়েছে, তা সশস্ত্র বাহিনীর উচ্চ প্রতিরক্ষা নেতৃত্বের মধ্যে রাজনীতিকরণের পথ খুলে দিয়েছে।’
সম্পাদকীয়তে জানানো হয়েছে, ‘আমাদের অপেক্ষা করতে হবে এবং দেখতে হবে কিভাবে 'অগ্নিবীরদের' প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। যেহেতু জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল দাবি করেছেন, ‘দেশ এই যুবকদের মধ্যে আইন মান্যকারী সেরা নাগরিকদের খুঁজে পাবেন, যারা জাতীয়তাবাদী অনুভূতি এবং জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করবে।’ এর অর্থ দেশ কি এবার হিন্দুত্ববাদী জাতীয়তাবাদ হবে?’
অগ্নিপথ প্রকল্পটি যেভাবে কর্পোরেট সেক্টরের সমর্থন পেয়েছে, তারও সমালোচনা করেছে সিপিআই (এম)। বলা হয়েছে, এটি (অগ্নিপথ) আসলে ‘হিন্দুত্ব-কর্পোরেট জোটের একটি কর্মসূচী’।
‘কর্পোরেট সেক্টর যেভাবে এই প্রকল্পকে স্বাগত জানাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে সেনাবাহিনী এখন বড় শিল্পে চাকরির জন্য প্রশিক্ষণ স্কুলে পরিণত হয়েছে। তবে, কঠিন বাস্তবতা হল, হাজার হাজার প্রাক্তন সেনা এবং অবসরপ্রাপ্ত অফিসাররা জানেন, কর্পোরেট সেক্টরে অবসরপ্রাপ্ত সেনাদের সংখ্যা খুবই কম।’
সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ‘অগ্নিপথ প্রকল্পকে কর্পোরেট সেক্টরের সমর্থনের অন্য একটি কারণ আছে। দেশে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদন শিল্পে বেসরকারি অংশীদারিত্বের পথ খুলে যাওয়ায় টাটা, মাহিন্দ্রা’র মতো মতো বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলি প্রতিরক্ষা উৎপাদন প্রকল্পে নামছে।’
সিপিআই (এম)-এর তরফে আরও দাবি করা হয়েছে, ‘চুক্তিভিত্তিক সেনা নিয়োগ এবং চার বছর শেষে চাকরীহারা সেনাবাহিনীর একটি বড় অংশ ভবিষ্যতে কর্পোরেটদের পাশাপাশি হিন্দুত্ববাদী শক্তির স্বার্থে কাজ করবে।’
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন