কেন্দ্রের 'অগ্নিপথ' প্রকল্পের বিরুদ্ধে ক্রমশ ক্ষোভ বাড়ছে চাকরী প্রার্থীদের মধ্যে। বিহারে গতকালের পর আজ ফের পথে নেমেছেন প্রতিরক্ষা দপ্তরে চাকরী করতে ইচ্ছুক যুবকরা। এছাড়াও দেশের অন্যান্য রাজ্যেও বিক্ষোভের আঁচ ছড়িয়েছে। রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ সহ একাধিক রাজ্যে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
বুধবার বিহারের বিভিন্ন জেলায় কেন্দ্রীয় সরকারের এই নতুন চুক্তিভিত্তিক সেনা নিয়োগ 'অগ্নিপথ' প্রকল্পের বিরোধিতা করে আন্দোলনে নামেন চাকরী প্রার্থীরা। বক্সার, মুজাফফরপুর, পাটনা সহ একাধিক জায়গায় সড়ক-রেল অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। এরপর আজ ফের রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে আন্দোলনে নামেন প্রতিরক্ষা দপ্তরের চাকরী প্রার্থীরা। এদিন সকালে আরা রেলস্টেশনে অবরোধ শুরু করেন বিক্ষোভকারীরা। ট্রেনের কোচে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস, ফায়ার এক্সটিংগুইশার ছুঁড়তে দেখা যায় রেল পুলিশকে।
জেহানাবাদ রেলস্টেশনও অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। পুলিশের সাথে ব্যাপক ধস্তাধস্তি হয় বিক্ষোভকারীদের। ভিডিওতে দেখা গেছে, পুলিশ এবং আন্দোলনকারীরা একে অপরের দিকে পাথর ছুঁড়ছেন।
বিহারের পাশাপাশি বৃহস্পতিবার রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব সহ আরও অন্যান্য রাজ্যেও এই অগ্নিপথ প্রকল্প বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন চাকরী প্রার্থীরা। যুবকদের এই বিক্ষোভ বেশ চিন্তায় ফেলেছে প্রশাসনকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, হরিয়ানার অবসরপ্রাপ্ত অগ্নিবীরেরা ভবিষ্যতে সরকারি চাকরি পাবেন। অপরদিকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে অগ্নিপথে কাজ শেষ করে কর্মীরা আধাসেনায় নিয়োজিত হতে পারেন।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, বর্তমানে প্রায় দেড়লাখ শূন্যপদ রয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে। কিন্তু সেগুলি পূরণ না করে ‘অগ্নিপথ’ নামে এক প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্র, যেখানে মাত্র ৪ বছরের মেয়াদে কাজ করতে পারবে তাঁরা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার তাঁদের ভবিষ্যত নিয়ে ছেলেখেলা করছে। বিক্ষোভ থেকে তাঁরা আওয়াজ তুলছেন - ‘ভারতী দো ইয়া আরতি দো’ অর্থাৎ, চাকরি দিন নাহলে আমাদের মেরে ফেলুন।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং যে ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পের ঘোষণা করেছেন, তাতে বছরে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার যুবক ‘অগ্নিবীর’ হিসাবে নিয়োগ পাবেন সেনাবাহিনীতে। এটি হবে চুক্তিভিত্তিক, মাত্র ৪ বছরের জন্য। তবে তারপর মাত্র ২৫ শতাংশ ‘অগ্নিবীর’ ১৫ বছর কাজের সুযোগ পাবেন। অর্থাৎ চার বছর পর বাদ পড়বেন প্রায় ৩৫ হাজার যুবক।
সামরিক বিশেষজ্ঞরা বিষয়টিকে ‘আত্মঘাতী’ পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছেন। শুধু তাই নয়, কর্মহীন হয়ে পড়ার পর বিশাল সংখ্যক অগ্নিবীরের মানসিক অবস্থা কোন দিকে যাবে, তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন