সমাপ্ত হয়েছে অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচন। তৃতীয় বারের জন্য সরকার গঠন করেছে এনডিএ জোট। আর লোকসভা ভোট সমাপ্ত হওয়ার পর দেশে ফিরে বিজেপি সরকারকে বিঁধলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। তিনি জানান, ভারত যে হিন্দুরাষ্ট্র নয়, ভারতীয় ভোটারদের সেই মতের প্রতিফলন ঘটেছে এই নির্বাচনে। পাশাপাশি, কংগ্রেসেরও সমালোচনা করেন তিনি।
বুধবার সন্ধ্যায় দমদম বিমানবন্দরে পৌঁছান অমর্ত্য সেন। সেখানে সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের সামনে তিনি বলেন, “ভারত যে হিন্দুরাষ্ট্র নয়, ভারতীয় ভোটারদের সেই মতের প্রতিফলন ঘটেছে এই নির্বাচনে।“ এরপরেই রামমন্দিরের প্রসঙ্গ টেনে তাঁকে বলতে শোনা যায়, “অনেক খরচ করে বড় মন্দির বানিয়েছে। এর দু'টো দিক আছে। একটা হল, ভারতবর্ষকে হিন্দুত্বের নিরিখে দেখা। মহাত্মা গান্ধী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুভাষচন্দ্র বসুর দেশে এটা হওয়ার কথা নয়।“
এরপরেই দেশে ধনী-গরিবদের মধ্যে অসাম্য বৃদ্ধি নিয়ে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ বলেন, “ধনীদের উপর নির্ভরশীলতা বেশি, দরিদ্রদের অবহেলা করার প্রথা বহু দিন ধরেই এই সরকারে চলছে। যে মন্ত্রিসভা হয়েছে, তা আগের মন্ত্রিসভার মতোই। মন্ত্রীরা সব একই। একটু রদবদল হলেও, রাজনৈতিক ভাবে যাঁরা শক্তিশালী তাঁরা এখনও শক্তিশালী।“
দেশের অর্থনীতি নিয়ে নিজের মতামত দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “দেশে বেকারত্ব বাড়ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য অবহেলিত। বেকারের সংখ্যাবৃদ্ধির সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের অবহেলার যোগ আছে। কংগ্রেস এবং বামপন্থী নিয়ে আপত্তির কথা তুলতে পারি। তবে তার চেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছি এই বর্তমান সরকারের আমলে। আমাদের এই অবস্থার পরিবর্তন করা দরকার।“
এরপরেই বিজেপির বিরুদ্ধে বিরোধীদের বিনা বিচারে জেলে রাখার অভিযোগ তুলেছেন অমর্ত্য সেন। তিনি জানান, “আমি যখন ছোট ছিলাম, আমার কাকা, তুতো ভাইদের অনেকেই জেলে ছিলেন। আমাদের আশা ছিল, ভারত স্বাধীন হলে বিনা বিচারে জেল বন্ধ হবে। সেটা যে বন্ধ হল না, তাতে কংগ্রেসেরও দোষ আছে। তারা এটা বদলায়নি। তবে এখনকার সরকার সেটাকে বেশি ব্যবহার করছে।“
তবে, বিজেপি এবার ভোটে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। বিরোধীরা অনেকটাই শক্তিশালী হয়েছে। এটা নিয়ে আশাবাদী তিনি। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের মতে, "নির্বাচনের ফলে কিছু পরিবর্তন হবে, এটা তো আমাদের আশা আছে। বিশেষত ভারতবর্ষ একটা ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। আমাদের সংবিধানও ধর্মনিরপেক্ষ। সেটাকে একটা হিন্দুরাষ্ট্রে পরিণত করাটা সমীচীন নয় বলে আমি মনে করি।“
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন