জাত গণনা নিয়ে সোমবার থেকে উত্তাল লোকসভা। সোমবার সংসদে কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী দাবি করেন, জাত গণনা শুরু করতে বদ্ধ পরিকর ইন্ডিয়া মঞ্চ। তার বিরোধিতায় মঙ্গলবার নাম না করে কংগ্রেস সাংসদের জাত তুলে নোংরা আক্রমণ করেন বিজেপি সাংসদ অনুরাগ ঠাকুর। সেই ভিডিও আবার শেয়ার করে অনুরাগ ঠাকুরের প্রসংশা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এর জেরে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সংসদে স্বাধিকারভঙ্গের অভিযোগে নোটিস দিল কংগ্রেস।
মঙ্গলবার মূলত রাহুল গান্ধীকে আক্রমণ করেই বাজেট বিতর্ক অংশে বক্তব্য রাখেন বিজেপি সাংসদ অনুরাগ ঠাকুর। তিনি এদিন নাম না করে বলেন, "কেউ কেউ দুর্ঘটনাজনিত কারণে হিন্দু। যাঁর নিজের জাতের ঠিক নেই, তিনি আবার জাত গণনার দাবি তুলছেন!" এর উত্তরে রাহুল বলেন, "যখনই কেউ দলিত কিংবা পিছিয়ে পড়া অংশ নিয়ে সরব হয়েছেন, তাঁকেই হেনস্থার মুখে পড়তে হয়েছে। তবে কোনও হেনস্থাই তাঁদের আটকাতে পারেনি। ফলে আমিও ওঁকে বলবো না ক্ষমা চাইতে। কিন্তু এই সংসদে জাতগণনা পাশ করিয়ে ছাড়ব।"
এরপরও কংগ্রেসকে আক্রমণ করেন অনুরাগ ঠাকুর। তিনি বলেন, কংগ্রেস ওবিসি বলতে 'ওনলি ব্রাদার ইন ল কমিশন' অর্থাৎ 'একমাত্র শ্যালকদের কমিশন' বোঝে। এমনকি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী ওবিসি সংরক্ষণের বিরোধী ছিলেন বলেও দাবি করেন বিজেপি সাংসদ। এর উত্তরে রাহুল জানান, "আপনি আমাকে যত ইচ্ছা অপমান করতে পারেন। প্রতিদিন হেনস্থা করতে পারেন। আমি লড়াই করে যাচ্ছি এবং সেই লড়াই চালিয়েও যাবো। তাই বলে যাচ্ছি, এই লোকসভাতেই জাত গণনা বিল পাশ করিয়ে যাবে 'ইন্ডিয়া' মঞ্চ।" এরপরেই মহাভারতের প্রসঙ্গ টেনে এনে রাহুল বলেন, "অর্জুনের একমাত্র লক্ষ্য ছিল পাখির চোখ। আমাদেরও একমাত্র লক্ষ্য জাত গণনা।"
তবে অনুরাগ ঠাকুরের জাত-মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক তৈরি হলেও, এই মন্তব্যের প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। বিজেপি সাংসদের বক্তব্যের একটি ভিডিয়ো ক্লিপ পোস্ট করে মোদী লেখেন, ‘‘আমার তরুণ এবং উদ্যমী সহকর্মী শ্রী অনুরাগ ঠাকুরের এই বক্তৃতাটি সকলের শোনা উচিত। তথ্য ও হাস্যরসের নিখুঁত মিশেলে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র নোংরা রাজনীতির মুখোশ খুলে দিয়েছেন তিনি।’’
মোদীর এই পোস্টের তীব্র নিন্দা করেছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। লোকসভায় কংগ্রেসের দলীয় উপনেতা গৌরব গগৈ বুধবার একটি ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ‘‘খুবই দুর্ভাগ্যের বিষয় যে নরেন্দ্র মোদী এমন একটি বক্তব্যের সমর্থন করছেন যেখানে বারবার দলিত, আদিবাসী ও অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণিকে অপমান করা হয়েছে।"
পঞ্জাবের জলন্ধরের কংগ্রেস সাংসদ চরণজিৎ সিংহ চান্নী লোকসভা সচিবালয়ের প্রধানের দফতরে প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিরুদ্ধে স্বাধিকারভঙ্গের নোটিস জমা দিয়েছেন। নোটিসে তিনি লিখেছেন, ‘‘মঙ্গলবার স্পিকারের নির্দেশে সাংসদ অনুরাগ ঠাকুরের বক্তৃতার কিছু অংশ সভার কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদী অনুরাগের অসম্পাদিত বক্তৃতার পুরো ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর ওই পোস্ট স্পষ্টতই স্বাধিকারভঙ্গের ঘটনা।’’
উল্লেখ্য, সোমবার রাহুল গান্ধী মহাভারতের অভিমুন্য বধকে উদাহরণ হিসাবে টেনে বলেছিলেন একবিংশ শতাব্দীতেও 'চক্রব্যূহ' ঘিরে রেখেছে দেশের যুব সম্প্রদায়, কৃষক, মহিলা এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। আর সেই চক্রব্যূহে রয়েছেন ছজন - নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ, মোহন ভগবত, অজিত দোভাল, মুকেশ আম্বানি এবং গৌতম আদানি। 'চক্রব্যূহ'-কে 'পদ্মব্যূহ'-ও বলা হতো। কারণ ওই 'চক্রব্যূহ' দেখতে ছিল অনেকটা পদ্মের মতো। একবিংশ শতাব্দীতে সেই 'চক্রব্যূহ' বা 'পদ্মব্যূহ' গড়ে উঠেছে মোদীর রাজত্বে। পদ্ম প্রতীক বুকে নিয়ে ঘোরেন প্রধানমন্ত্রী। এমনকি মোদীর রাজত্বে একটা ভয়ের আবহ তৈরি হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছিলেন বিরোধী দলনেতা।
রাহুল গান্ধী এদিন বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক গ্রাহকদের কাছ থেকে অ্যাকাউন্টে ন্যূনতম নগদ না থাকার জন্য জরিমানা বাবদ যে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করেছে, তা নিয়েও সরব হন। এব্যাপারেও নরেন্দ্র মোদীর সেই 'চক্রব্যূহ' সচেষ্ট বলেও তিনি অভিযোগ করেন। জানা যায়, গত পাঁচ বছরে এই খাতে ৮,৫০০ হাজার কোটি টাকা আদায় করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি। এমনকি গত আর্থিক বছরেই এই বাবদ আদায় হয়েছে ২,৩৩১ হাজার কোটি টাকা বলে লিখিত জবাব দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী।
রাহুল গান্ধীর অভিযোগ, "মোদীর 'চক্রব্যূহ' তৈরি করা এই জরিমানা দেশের সাধারণ মানুষের শিরদাঁড়া ভেঙে দিয়েছে। তবে আপনাদের মনে রাখা উচিত যে দেশের মানুষ মোটেই অভিমুন্য নয়, তারা অর্জুন। তারা ভালোভাবেই জানেন কীভাবে এই অত্যাচারের জবাব দিয়ে 'চক্রব্যূহ' ভাঙতে হয়।"
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন