হিংসার আগুনে জ্বলছে বিজেপি শাসিত মণিপুর (Manipur)। রাজধানী ইম্ফল-সহ একাধিক জায়গায় দোকানপাট ভাঙচুর, হাতাহাতি, গাড়ি-বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নামানো হয়েছে আধাসেনা।
ইম্ফল পশ্চিম, বিষ্ণুপুর, জিরিবাম এবং চুরাচাঁদপুর সহ বেশ কয়েকটি উত্তেজনা-কবলিত জেলায় জারি করা হয়েছে কারফিউ (Curfew)। চলছে রুট মার্চও। এমনকি ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
পরিস্থিতি এতটাই অগ্নিগর্ভ যে, নিজ রাজ্যের হয়ে সাহায্য চেয়ে ট্যুইট করেছেন অলিম্পিক্স পদক জয়ী বক্সার মেরি কম (Mary Kom)। তিনি লিখেছেন, ‘আমার রাজ্য জ্বলছে। দয়া করে সাহায্য করুন।’
জানা যাচ্ছে, মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)।
র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সের বেশ কিছু কোম্পানিও মণিপুরে পাঠানো হয়েছে। ভারতীয় বিমানবাহিনীর বিমানে করে RAF এর সদস্যদের মণিপুরে পাঠানো হয়েছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর আসাম রাইফেলসের কর্মীরা মণিপুরের হিংসা কবলিত এলাকা থেকে লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এ পর্যন্ত সাড়ে সাত হাজার নাগরিককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, এক ভিডিও বার্তায় জনগণকে শান্ত হতে এবং শান্তি বজায় রাখতে রাজ্য সরকারকে সহযোগিতা করার আবেদন জানিয়েছেন মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং (Chief Minister N. Biren Singh)।
তিনি জানান, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় কিছু জায়গায় হিংসা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। আমাদের সমাজের দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির কারণে এই ধরণের ঘটনা ঘটছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে রাজ্য সরকার।’ একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সমস্ত সম্প্রদায় এবং নেতাদের সাথে কথা বলে প্রকৃত দাবি ও অভিযোগের নিষ্পত্তি করবে সরকার।’
মণিপুরে হাই কোর্টের এক নির্দেশকে সামনে রেখে শুরু হয়েছে এই বিক্ষোভ। জানা যাচ্ছে, নিজেদের তফশিলি সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্তির জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে 'মেইতেই সম্প্রদায়' (Meitei/Meetei)। আবার, 'মেইতে সম্প্রদায়'-এর দাবির বিরোধিতা করে আসছে কুকি-সহ অধিকাংশ আদিবাসী সংগঠন। তাদের বক্তব্য, মেইতেরাও যদি তফসিলি উপজাতির স্বীকৃতি পেয়ে যায়, তাহলে আদিবাসীদের অধিকার ক্ষুন্ন হবে। এ নিয়ে এতদিন চাপা উত্তেজনা ছিল।
এরপরেও, মেইতেইদের দাবিকে বিবেচনা করার জন্য রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেয় মণিপুর হাইকোর্ট। তারপরেই নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন এলাকায়।
তাছাড়া, মণিপুরের স্থানীয় বনাঞ্চলগুলিতে সমীক্ষা চালাচ্ছে বিজেপি সরকার। তা নিয়ে আদিবাসীদের আশঙ্কা, বনভূমি ধ্বংস করতে চলেছে সরকার।
তার চেয়েও তাৎপর্যপূর্ণ, গত কয়েক মাসে সেরাজ্যে অন্তত তিনটি গির্জা ভেঙেছে প্রশাসন। সরকারের দাবি, ওই গির্জাগুলি ছিল বেআইনি। সরকারের এই পদক্ষেপে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে আদিবাসী খ্রিস্টানরা। সেটাও এই বিক্ষোভের অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন