আইসিআইসিআই (ICICI) ব্যাঙ্কের প্রাক্তন সিইও ছন্দা কোছর (Chanda Kocher) ও তাঁর স্বামী দীপক কোছর (Dipak Kochar)-কে জামিনের নির্দেশ দিয়েছে বোম্বে হাইকোর্ট (The Bombay High Court)। আদালতের পর্যবেক্ষণ, আইন অনুযায়ী তাঁদের গ্রেফতার করা হয়নি।
গত ২৪ ডিসেম্বর, ঋণ জালিয়াতি ও মানি লন্ডারিং মামলায় ছন্দা কোছর ও তাঁর স্বামী দীপক কোছরকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই (CBI)। কিন্তু, সেই গ্রেফতারিকে 'অবৈধ' বলে জানিয়েছে আদালত। একইসঙ্গে, কোছর দম্পতির প্রত্যেককে এক লক্ষ টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন দিয়েছে মহারাষ্ট্রের শীর্ষ আদালত।
সোমবার আদালত জানিয়েছে,'আমরা বুঝতে পারছি যে আবেদনকারীদের (কোছারদের) গ্রেফতারি আইনের বিধান অনুসারে ছিল না। এবং এই বিষয়টির জন্য তাদের জামিন দেওয়া হচ্ছে।'
তবে, কোছার দম্পতিকে কয়েকটি শর্ত দিয়েছে আদালত। যার মধ্যে রয়েছে, দুজনকেই তদন্তে সহযোগিতা করতে হবে। যখনই তলব করা হবে তখন সিবিআই অফিসে তাঁদের হাজির হতে হবে। এবং কোছার দম্পতিকে সিবিআইয়ের কাছে নিজেদের পাসপোর্ট জমা রাখতে হবে।
ছন্দা কোছারের আইনজীবী অমিত দেশাই ও কুশল মোর আদালতে লিখিতভাবে জানায়, তাঁদের মক্কেলকে 'অবৈধভাবে জিজ্ঞাসাবাদ' করার পরে গ্রেফতার করেছে সিবিআই।
আদালতে আইনজীবী দেশাই দাবি করেন, 'ছন্দা কোছার তাঁর স্বামীর ব্যবসার সাথে কী ঘটছে তা জানতেন না।' দেশাই আরও বলেন, 'প্রাক্তন আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের প্রধানকে গ্রেপ্তার করেছিলেন একজন পুরুষ অফিসার। কিন্তু, আইন অনুসারে গ্রেফতারির মেমোতে প্রয়োজনীয় মহিলা অফিসারের উপস্থিতি ছিল না।'
ঠিক কি অভিযোগ কোছার দম্পতির বিরুদ্ধে?
অভিযোগ উঠেছে, ২০১২ সালে ICICI ব্যাঙ্কের সিইও থাকাকালীন বেআইনিভাবে ভিডিওকন (Videocon Group) গ্রুপকে ৩,২৫০ কোটি টাকার ঋণের ছাড়পত্র দেন ছন্দা কোছর। আর, সেই ঋণ পাওয়ার পর (৬ মাসের মধ্যে) দীপক কোছরের কোম্পানি NuPower Renewables-এ ৬৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ভিডিওকন গ্রুপ। এসময় ভিডিওকন গ্রুপের চেয়ারম্যান ছিলেন ভেনুগোপাল ধুত (Venugopal Dhoot)।
এই অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রী, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এবং সেবিকে চিঠি লিখেন ভিডিওকন গ্রুপের শেয়ারহোল্ডার অরবিন্দ গুপ্তা ও ICICI ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৮ সালে ছন্দা কোছর ও তাঁর স্বামী দীপক কোছরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED) ও সিবিআই (CBI)। এরপর ২০২০-র সেপ্টেম্বরে, দীপক কোছরকে গ্রেফতার করে ইডি।
জানা যাচ্ছে, ২০১২ সালে ভিডিওকন গ্রুপকে যে ঋণ দিয়েছিল ICICI ব্যাঙ্ক, পরবর্তীকালে তা এনপিএ (NPA) হয়ে যায়। পরে জানা যায়, এটি একটি 'ব্যাঙ্ক জালিয়াতি'। এই অভিযোগ ওঠার পরেই ২০১৮ সালে, আইসিআইসিআই (ICICI) ব্যাঙ্ক থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন ছন্দা কোছর।
২০১৯ সালে বিচারপতি বি.এন. শ্রীকৃষ্ণ কমিটির রিপোর্ট এসেছে। যে তদন্তে কমিটি জানিয়েছে, ভিডিওকনকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কের আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন ছন্দা কোছর। এই ঋণের কিছু অংশ তাঁর স্বামী দীপকের মালিকানাধীন একটি সংস্থাকে দেওয়া হয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন