পদ্মশ্রী পুরস্কারপ্রাপ্ত নবতিপর নৃত্যশিল্পী গুরু মায়াধার রাউতকে রীতিমত হেনস্থা করে সরকারী বাসভবন থেকে উচ্ছেদ করলো কেন্দ্র সরকার। এমনকি তাঁর পদ্মশ্রীর সমন্নানা পত্রও রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে। এই ঘটনায় হতবাক এবং ক্ষুব্ধ শিল্পী ও তাঁর পরিবার। মোদী সরকারের আমলে শিল্পীদের কোনো সম্মান নেই বলে কেন্দ্রকে কটাক্ষ করেছেন শিল্পীর কন্যা। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত রাজনৈতিক মহল।
রাজীব গান্ধী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন দিল্লির এশিয়ান গেমস ভিলেজে শিল্পী কোটায় সরকারী আবাসন লিজে পেয়েছিলেন ওডিশি নৃত্যশিল্পী মায়াধর রাউত সহ আরও প্রায় ৩০ জন শিল্পী। কেন্দ্র সরকার জানিয়েছে, ২০১৪ সালেই এই লিজের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। আবাসন ছেড়ে দেওয়ার জন্য শিল্পীদের নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। শিল্পীরা এই নোটিসের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন এবং মামলা হেরে যান তাঁরা। ফ্ল্যাট ছেড়ে দেওয়ার জন্য ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছিল তাঁদের।
কেন্দ্রের অভিযোগ, এরপরও মায়াধার সহ ৮ জন ফ্ল্যাট ছাড়েননি। তাই উচ্ছেদ করা হয়েছে।
বুধবার ৯১ বছর বয়সী নৃত্যশিল্পীর ফ্ল্যাটে ঢুকে তাঁর সমস্ত জিনিস বলপূর্বক রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে। এমনকী তাঁর পদ্মশ্রী সম্মাননা পত্রও রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। এই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতেই কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন নেটিজেনরা।
কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে নৃত্যশিল্পীর মেয়ে মধুমিতা রাউত বলেন, "এই সরকারের আমলে শিল্পীরা কোনো সম্মান পান না। সরকারের কোনো সাংস্কৃতিক নীতি নেই। আমি উচ্ছেদের বিপক্ষে নই, কিন্তু অমানবিকভাবে এটা করা হয়েছে। আমাদের জিনিসপত্র ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে। আমি যদি ওইদিন বাবার সাথে না থাকতাম আমার বাবা মারাও যেতে পারতেন।"
সংবাদমাধ্যমের সামনে মধুমিতা রাউত জানিয়েছেন, ওইদিন দুপুর ১ টার সময় কয়েকজন ফ্ল্যাটে এসে নিজেদের উচ্ছেদ অফিসার হিসেবে পরিচয় দিয়ে তৎক্ষণাৎ বাড়ি খালি করে দিতে বলেন। সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন পুলিশ এসে বাড়ি থেকে জিনিস বের করে রাস্তায় ছুঁড়তে শুরু করেন।
মিসেস রাউতের অভিযোগ, তিনি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে উচ্ছেদ নোটিশ দেখতে চাইলে তা দেখাতে অস্বীকার করেন অফিসাররা। এমনকী একদিনের সময় চাওয়া হলে তাও দিতে অস্বীকার করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেছেন, "আমার বাবা এতো বছর ধরে দেশের সেবা করেছেন। গুরু-শিষ্য পরম্পরার অধীনে শিষ্যদের শিক্ষা দিতেন তিনি। নিজের এই সেবা থেকে এক টাকাও উপার্জন করতেন না তিনি। তাঁর কোথাও কোনো সম্পত্তি বা জমি নেই। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মাত্র ৩,০০০ টাকা আছে। আপনি কিভাবে তাঁকে বের করে দিতে পারেন? বিশ্বের আর কোথাও এরকম হয়না।"
যদিও এই ঘটনায় রাজনৈতিক অভিসন্ধি দেখছেন মধুমিতা। তাঁর অভিযোগ, পদ্মশ্রী সম্মান এবং এই ফ্ল্যাট রাজীব গান্ধী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন পেয়েছিলেন তাঁর বাবা। বিজেপি তা কেড়ে নিতে চাইছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন