আসামে ডিলিমিটেশন সংক্রান্ত চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রকাশ করল ভারতের নির্বাচন কমিশন (ECI)। শুক্রবার রাজ্যের ১৯টি সংসদীয় আসন এবং ১২৬টি বিধানসভা আসন সংখ্যা অপরিবর্তিত রেখেই এই ডিলিমিটেশন তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। যদিও তফশিলি জাতি (SC) এবং তফশিলি উপজাতিদের (ST) জন্য সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা বেড়েছে।
গতকাল ডিলিমিটেশন সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর এই তালিকা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে কংগ্রেস এবং অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট। AIUDF জানিয়েছে, বিজেপির নির্দেশে এই ডিলিমিটেশন করা হচ্ছে এবং এর ফলে আসাম থেকে মুসলিমদের প্রতিনিধিত্ব কমবে।
অন্যদিকে বিজেপি এই বিজ্ঞপ্তিকে স্বাগত জানিয়েছে। এর আগে ডিলিমিটেশন সংক্রান্ত বৈঠক বয়কট করে কংগ্রেস। সেক্ষেত্রে কংগ্রেসের দাবি ছিল, ২০২৬ সালে যখন সারা দেশে ডিলিমিটেশন করা হবে তখনই আসামেও করা হোক। যদিও কংগ্রেসের সেই দাবি খারিজ হয়ে যায়।
এক সরকারি বিবৃতিতে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, খসড়া তালিকার বিষয়ে গুয়াহাটিতে তিনদিনের জনশুনানি এবং এই বিষয়ে বিশিষ্টজনদের মতামত নেবার পর সমস্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে এই চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে গত জুন মাসে খসড়া তালিকা প্রকাশের আগে এবং পরে দুটি জনশুনানির আয়োজন করা হয়। শেষ জনশুনানি অনুষ্ঠিত হয় জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে। এছাড়াও ২০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক করা হয়।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে ২০০১ সালের জনগণনার তথ্যের ভিত্তিতে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। নতুন তালিকায় ১৯টি বিধানসভা এবং ২টি লোকসভা আসন তফশিলি উপজাতিদের জন্য এবং ১টি লোকসভা এবং ৯টি বিধানসভা আসন তফশিলি জাতিদের জন্য সংরক্ষিত করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের চূড়ান্ত নির্দেশিকা অনুসারে, তফশিলি জাতিদের জন্য সংরক্ষিত আসন ৮ থেকে বাড়িয়ে ৯ করা হয়েছে। তফশিলি উপজাতিদের ক্ষেত্রে এই আসন সংখ্যা ১৬ থেকে বাড়িয়ে ১৯ করা হয়েছে। এছাড়াও বোড়োল্যান্ড এলাকায় আসন সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, জনশুনানি চলাকালীন ১২২২ জন তাঁদের কাছে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব জমা দিয়েছিলেন এবং চূড়ান্ত তালিকা তালিকা প্রস্তুত করার সময় এই প্রস্তাব এবং আপত্তির ৪৫ শতাংশ গ্রহণ করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের বিবৃতি অনুসারে, সাধারণ মানুষের প্রস্তাব মেনে নিয়ে বেশ কিছু আসনের ক্ষেত্রে যৌথ নাম রাখা হয়েছে। যেমন, দরং-উদলগিরি, হাজো-শুয়ালকুচি, বোকো-ছায়াগাঁও, নগাঁও-বাতাদ্রাবা, ভবানীপুর-সরভোগ এবং আলগাপুর-কাট্টিছেড়া।
এর আগে ১৯৭৬ সালে আসামে ডিলিমিটেশন করা হয়েছিল। সেবার ভিত্তিবর্ষ হিসেবে ১৯৭১ সালের জনগণনা রিপোর্টের ভিত্তিতে ওই ডিলিমিটেশন হয়েছিল। ২০০৭ সালে ডিলিমিটেশন হবার কথা থাকলেও আইন শৃঙ্খলা জনিত কারণে সেই প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।
উল্লেখযোগ্যভাবে, জনপ্রতিনিধিত্ব আইন, ১৯৫০-এর ধারা ৮-এ-এর অধীনে আসামের সংসদীয় ও বিধানসভা কেন্দ্রগুলিকে সীমাবদ্ধ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ভারতের নির্বাচন কমিশনকে।
এই বিজ্ঞপ্তি অনুসারে বেশ কিছু কেন্দ্রের নাম বদল করা হয়েছে। রাজ্যের কালিয়াবোর লোকসভা আসনের নাম পরিবর্তন করে করা হয়েছে কাজিরাঙ্গা। এই কেন্দ্রের বর্তমান সাংসদ গৌরব গগৈ। এছাড়াও মানস বিধানসভা কেন্দ্রের নাম বদল করে রাখা হয়েছে মানস ন্যাশনাল পার্ক অ্যান্ড টাইগার রিজার্ভ। মনকাছাড় কেন্দ্রের নাম বদল করে রাখা হয়েছে বীরসিং জড়ুয়া, সাউথ শালমারার নাম বদলে হয়েছে মনকাছাড়, মানিকপুরের নাম বদলে হয়েছে সৃজনগ্রাম, রূপসীর নাম বদলে হয়েছে পাকাবেতবাড়ি, গোবর্ধন কেন্দ্রের নাম বদলে হয়েছে মানস, বাতাদ্রবার নাম বদলে হয়েছে ধিং, বদরপুরের নাম বদল করে রাখা হয়েছে করিমগঞ্জ নর্থ, নর্থ করিমগঞ্জের নাম বদল করে রাখা হয়েছে করিমগঞ্জ সাউথ, সাউথ করিমগঞ্জের নাম বদলে রাখা হয়েছে পাথরকান্দি এবং রাতাবাড়ির নাম বদলে রাখা হয়েছে রামকৃষ্ণ নগর।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন