আসামের বন্যা পরিস্থিতি ক্রমশই ভয়ংকর আকার ধারণ করছে। রাজ্যের ২৬টি জেলাতেই যে বন্যার প্রভাব পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২,৫৪৫টি গ্রাম। প্রশাসনিক তথ্য অনুসারে, আসামের বন্যায় এখনও পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১৩.৯৯ লক্ষ মানুষ। আসাম স্টেট ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি এক বুলেটিনে জানিয়েছে, এখনও সমস্ত প্রধান নদীই বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। রাজ্যের বন্যা, ঝড় এবং বাজ পড়ে এখনও পর্যন্ত ৯৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে ৮৩ জনই বন্যায় ভেসে গেছেন।
রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে কাছাড়, বরপেটা, কামরূপ, নওগাঁ, ধুবড়ি, দারং, বিশ্বনাথ, গোলাঘাট, গোয়ালপাড়া, হাইলাকান্দি, শিবসাগর, ডিব্রুগড়, মরিগাঁও, তিনসুকিয়া এবং নলবাড়িতে জেলার বহু অংশ এখনও জলের তলায়। সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ধুবড়ি জেলা। এই জেলার ২,৪১,১৮৬ জন মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এছাড়াও কাছাড়ে ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা ১,৬০,৮৮৯ এবং দরং জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১,০৮,১২৫ জন।
রাজ্য প্রশাসন জানিয়েছে বন্যা পীড়িত মানুষদের ত্রাণ শিবিরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ৩৩টি বোট ব্যবহার করা হয়েছে। নামানো হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনিকেও। রাজ্যের ১৮৯টি ত্রাণ শিবিরে এবং ১১০টি ত্রাণ বন্টন শিবিরে ৪১,৫৯৬ জন এবং ৭২,৮৪৭ জনকে রাখা হয়েছে।
এখনও পর্যন্ত নিমাটিঘাট, তেজপুর, ধুবড়িতে ব্রহ্মপুত্র নদী বিপদসীমার ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে। ডিসাং, নাংলামুরাঘাট, খোয়াং-এ লাল সংকেতের ওপর দিয়ে বইছে বুরসিডিহিং নদী। করিমগঞ্জে কুশিয়ারা নদীও বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। বন্যার প্রকোপে বিভিন্ন জায়গায় সেতু, রাস্তা ভেঙে পড়েছে।
আসামে এবারের বন্যায় ৩৯,১৩৩ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে গেছে। যা আগামী দিনে রাজ্যের শস্য ভান্ডারকে প্রভাবিত করবে।
জানা গেছে রাজ্যের ২২১টি গবাদি পশু রক্ষণাবেক্ষণ কেন্দ্র সম্পূর্ণরূপে ভেসে গেছে। এরফ্লে ৯,৮৬,২৫৩টি পশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বিগত এক দশকের মধ্যে এবারের বন্যাতেই সবথেকে বেশি প্রভাবিত হয়েছে কাজিরাঙ্গা ন্যাশনাল পার্ক। যেখানে এখনও পর্যন্ত ১০টি একশৃঙ্গ গন্ডার সহ ১৭৪টি পশুর মৃত্যু হয়েছে। এর আগে ২০১৭-র ভয়াবহ বন্যায় ২৪টি গন্ডার সহ ২৯১টি পশুর মৃত্যু হয়েছিল। যদিও এবার বনদপ্তর আগে থেকেই তৎপর থাকায় ১৫৩টি পশুকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
ন্যাশনাল পার্কের ডিরেক্টর সোনালী ঘোষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ১,০৯০ বর্গ কিলোমিটারের এই অভয়ারণ্যে ২০১৭, ১৮, ২১, ২২ এবং ২৩ সালে বন্যা হলেও এবার জলস্তর সবথেকে বেশি। জোরহাটের নিমাটিঘাটে এবার জলের উচ্চতা বেড়ে হয়েছিল ৮৭.৪৭ মিটার। যা ২০১৭ সালে হয়েছিল ৮৭.২৭ মিটার।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন