২০ হাজার কোটি টাকার ব্যাঙ্ক জালিয়াতি তদন্তে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ৩৫টি জায়গায় হানা দিন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED)। দিল্লি-এনসিআর, মুম্বাই এবং নাগপুরের বিভিন্ন জায়গায় এদিন সকাল থেকে চলছে ইডি অভিযান। মূলত অ্যামটেক গ্রুপ এবং সংস্থার পদাধিকারীদের বিভিন্ন অফিস ও বাড়ির ঠিকানায় চলছে তল্লাশি অভিযান। দিল্লি, গুরগাঁও, নয়ডা, মুম্বাই এবং নাগপুরের বিভিন্ন অফিসে চলছে এই অভিযান।
এর আগে ২০ হাজার কোটি টাকার ব্যাঙ্ক জালিয়াতির অভিযোগে অ্যামটেক-এসিআইএল লিমিটেড-এর বিরুদ্ধে সিবিআই এফআইআর দায়ের করেছিল। সূত্র অনুসারে, সুপ্রিম কোর্টও এই বিষয়ে ইডি তদন্তের জন্য বলেছিল। তালিকাভুক্ত কয়েকটি কোম্পানিতে ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যাঙ্ক জালিয়াতির এই অভিযোগের পর যা শেষ পর্যন্ত ন্যাশনাল কোম্পানি ল ট্রাইব্যুনাল (NCLT) প্রক্রিয়ায় চলে যায়। ফলে নামমাত্র দামে কিছু সম্পদ উদ্ধার করা সম্ভব হয়। কিন্তু তার পরেও ব্যাঙ্কের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা।
ইডি-র মতে বিরাট অঙ্কের এই টাকা ঋণ নিয়ে ঘুরপথে সেই টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছিল রিয়েল এস্টেট, বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং নতুন কিছু কোম্পানিতে। এর জন্য ওই সংস্থার হিসেবে ভুয়ো বিক্রি, ভুয়ো দেনাদার, ভুয়ো সম্পত্তি এবং ভুয়ো লাভ দেখানো হয়েছিল। কোনোভাবেই যাতে সংস্থার গায়ে এনপিএ-র তকমা না লাগে তা নিশ্চিত করতে এই পদ্ধতি নেওয়া হয়েছিল।
এছাড়াও এই সংস্থার শেয়ারের ক্ষেত্রে শেয়ার বাজারে ভুয়ো মূল্যায়ন দেখিতে দাম বাড়ানো হয়েছিল, জালিয়াতি করা হয়েছিল কোম্পানির হিসেবের খাতাতেও। যাতে আগামী দিনে এই সংস্থা আরও বড়ো অঙ্কের ঋণ পেতে পারে।
এই জালিয়াতির জন্য বিভিন্ন ভুয়ো সংস্থার নামে সম্পত্তি কেনা হয়েছিল এবং অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছিল বিভিন্ন বৈদেশিক সংস্থায়। ইডি সূত্র অনুসারে বিভিন্ন বেনামি ডিরেক্টর এবং বেনামী শেয়ারহোল্ডারদের মাধ্যমে এই কাজ করা হয়েছিল।
এই বছরের ৯ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটকে অ্যামটেক অটো লিমিটেডের বিরুদ্ধে ব্যাঙ্ক জালিয়াতির অভিযোগ তদন্ত করার নির্দেশ দেয়। জানা যায় এই ব্যাঙ্ক জালিয়াতির মোট পরিমাণ হতে পারে ২৭,০০০ কোটি টাকা।
বিচারপতি বি আর গাভাই এবং সন্দীপ মেহতার বেঞ্চ এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটকে এই বিষয়ে সম্পূর্ণ তদন্তের নির্দেশ দেয়। আদালতের সামনে এক পিটিশনে ব্যাঙ্ক জালিয়াতি সংক্রান্ত বিষয়টি সামনে আনা হয় এবং দাবি করা হয় এই জালিয়াতির মোট পরিমাণ ২৭ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়াতে পারে, যার সবটাই সাধারণ মানুষের টাকা।
২০২২ সালের নভেম্বর মাসে আইএএনএস-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আবেদনকারীর আইনজীবী জয় অনন্ত দেহাদারী বলেন, অ্যামটেক অটো এবং গ্রুপ অফ কোম্পানিস বিভিন্ন প্রাইভেট এবং পাবলিক লিমিটেড ব্যাঙ্ক থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল। এরপরেই তারা ঋণখেলাপী হয়। যদিও এটা কোনও সাধারণ ঘটনা ছিল না। সুপ্রিম কোর্টে সিরিয়াস ফ্রড ইনভেস্টিগেশন অফিস (SFIO) এবং সিবিআই যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছে তাতে দেখা গেছে সুপরিকল্পিত ভাবে অপরাধমূলক চক্রান্ত করে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেওয়া এই টাকা একশোর বেশি ভুয়ো কোম্পানীতে পাঠানো হয়েছে।
এই জালিয়াতি প্রসঙ্গে সিবিআই জানিয়েছিল, ১৯টি ব্যাঙ্ক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কনসোরটিয়ামের মাধ্যমে এই ঋণ নেওয়া হয়েছিল। তদন্তের সময় সিবিআই এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে ডেকে পাঠালেও আইডিবিআই ব্যাঙ্ক, ব্যাঙ্ক অফ মহারাষ্ট্র, পিএনবি, এসবিআই এবং আইএফসিআই লিমিটেড ছাড়া কেউ সেই তদন্তে সাড়া দেয়নি। এই পাঁচটি ব্যাঙ্কের মধ্যে শুধুমাত্র আইডিবিআই ব্যাঙ্ক রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কাছে এই ঘটনাকে ‘জালিয়াতি’ বলে জানিয়েছিল। ২০২২-সালের ২৬ সেপ্টেম্বর এই ঘটনাকে জালিয়াতি বলে অভিহিত করার পর ওই বছরেরই ৪ অক্টোবর আরবিআই-কে লিখিত ভাবে একথা জানায় আইডিবিআই ব্যাঙ্ক।
এসএফআইও-র জমা দেওয়া এভিডেভিট অনুসারে, অ্যামটেক অটো সহ যে চার সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে সেই চার সংস্থার মধ্যে অ্যামটেক অটো ঋণ নিয়েছিল ১০,৩৫৫ কোটি টাকা, কাসটেক্স টেকনোজজিস – ৮,৪২৭ কোটি টাকা, মেটালিস্ট ফোরজিং লিমিটেড – ১,৬৩০ কোটি টাকা এবং এআরজিএল লিমিটেড – ১,৫০৯ কোটি টাকা। উল্লেখ্য, বাকি তিনটি কোম্পানিই অ্যামটেক অটো লিমিটেড গ্রুপ অফ কোম্পানিজ-এর অন্তর্ভুক্ত।
- With Agency Inputs
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন