সংসদের আসন্ন বাজেট অধিবেশনে ব্যাঙ্কিং রেগুলেশন অ্যাক্ট ১৯৪৯-এ কিছু সংশোধনী আনতে চলেছে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। দেশের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার সংস্কারে এছাড়াও আরও কিছু আইন আনতে চলেছে তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় ফেরা এনডিএ সরকার।
সূত্র অনুসারে, পাবলিক সেক্টর ব্যাঙ্কের বেসরকারীকরণের জন্য ব্যাঙ্কিং কোম্পানিস (অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড ট্রান্সফার অফ আন্ডারটেকিংস) অ্যাক্ট ১৯৭০ এবং ব্যাঙ্কিং কোম্পানিস (অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড ট্রান্সফার অফ আন্ডারটেকিংস) অ্যাক্ট ১৯৮০র সংশোধনী প্রয়োজন। ব্যাঙ্কের বেসরকারীকরণের জন্য ব্যাঙ্কের জাতীয়করণের সঙ্গে যুক্ত এই দুই আইনে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।
কেন্দ্রের মোদী সরকার তৃতীয় দফায় জোট গড়ে ক্ষমতায় এসে প্রথম বাজেট অধিবেশনেই নিয়ে আসতে চলেছে এই বিল। এর আগে দ্বিতীয় দফায় সরকারে আসার পর ২০২১ সালে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের সময় ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের বিল তালিকাভুক্ত করা হলেও সংসদে সেই বিল পেশ করা হয়নি। এবারে নতুন সরকারের প্রথম বাজেট অধিবেশনেই সেই বিল আনতে চলেছে কেন্দ্রের এনডিএ সরকার।
সংসদে এই দুই সংশোধনী পাশ হয়ে গেলে বিভিন্ন সরকারি ব্যাঙ্কে সরকারের অংশীদারী ৫১ শতাংশ থেকে নামিয়ে আনতে আর কোনও বাধা থাকবে না। আগামী ২২ জুলাই সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হবে এবং ২৩ জুলাই বাজেট পেশ হবার কথা। আগামী ১২ আগস্ট এই অধিবেশন শেষ হবার কথা।
এই ব্যাঙ্ক বিল প্রসঙ্গে গতবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী সীতারামন জানিয়েছিলেন দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণে ব্যাঙ্ক আইন সংশোধনি বিল আনা হচ্ছে। সেই সময় বিরোধীরা প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছিল, দুই ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণে মোদী সরকার যে ব্যাঙ্ক আইন সংশোধন করতে চলেছে তাতে বাকি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে বেসকারিকরণের পথ খুলে দেওয়া হবে। প্রবল বিরোধিতার কারণে সেই সময় সংসদে ওই বিল পেশ করা সম্ভব হয়নি। ওই সময় নির্মলা সীতারামণ আরও জানান, আইডিবিআই ব্যাঙ্ক ছাড়াও আরও দুটি পাবলিক সেক্টর ব্যাঙ্ক এবং একটি জেনারেল ইনস্যুরেন্স কোম্পানির বেসরকারীকরণের জন্যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, একটি জেনারেল ইনস্যুরেন্স কোম্পানির বেসরকারীকরণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই সংসদের ছাড়পত্র পেয়েছে। ২০২১ সালের আগস্ট মাসে সংসদের বাদল অধিবেশনের সময়েই জেনারেল ইনস্যুরেন্স বিজনেস (ন্যাশনালাইজেশন) অ্যামেন্ডমেন্ট বিল, ২০২১ পেশ করা হয়।
উল্লেখ্য, ব্যাঙ্ক বেসরকারি হাতে থাকার সময়ে ঢালাও অর্থ তছরুপ ও ব্যাঙ্ক ফেল হওয়ার ঘটনা বেড়ে চলায় গ্রাহকদের আর্থিক সুরক্ষার দিক ভেবেই ব্যাঙ্ক রাষ্ট্রায়ত্তকরণের পরিকল্পনা নিয়েছিল তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার। প্রথম দফায় ১৯৬৯ সালে ১৪টি বেসরকারি ব্যাঙ্ক রাষ্ট্রায়ত্তকরণ হয়। ১৯৮০ সালে ফের ৬ টি বেসরকারি ব্যাঙ্ক রাষ্ট্রায়ত্তকরণ হয়। সংসদে বিল পাশ করে আইন এনে ব্যাঙ্ক রাষ্ট্রায়াত্তকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরণ পরিকল্পনা অনুসারে, ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া এবং ওরিয়েন্টাল ব্যাঙ্ক অফ কমার্সকে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের সাথে যুক্ত করা হয়েছে।
সিন্ডিকেট ব্যাঙ্ককে কানাড়া ব্যাঙ্কের সাথে সংযুক্ত করা হয় এবং এলাহাবাদ ব্যাঙ্ককে ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কে যুক্ত করা হয়। অন্ধ্র ব্যাঙ্ক এবং কর্পোরেশন ব্যাঙ্ককে ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে।
এছাড়াও প্রথম ত্রিমুখী সংযুক্তিকরণে, ব্যাঙ্ক অফ বরোদার সঙ্গে ২০১৯ সালে বিজয়া ব্যাঙ্ক এবং দেনা ব্যাঙ্ককে সংযুক্ত করা হয়েছে। স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া তার পাঁচটি সহযোগী ব্যাঙ্ককে সংযুক্ত করেছে। যার মধ্যে আছে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ পাতিয়ালা, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ বিকানের এবং জয়পুর, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ মাইসোর, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ত্রাভাঙ্কোর, এবং স্টেট ব্যাঙ্ক অফ হায়দ্রাবাদ এবং ভারতীয় মহিলা ব্যাঙ্ক। এপ্রিল ২০১৭ থেকে তা কার্যকর হয়েছে৷
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন