ব্যাঙ্গালুরুতে প্রবল বৃষ্টির জেরে রবিবার রাত থেকেই জলমগ্ন মুন্নিখোলালা ও ভার্থুর অঞ্চল। এই অঞ্চলে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া, মুর্শিদাবাদ জেলার প্রায় ৩০০০ শ্রমিক পরিবার বসবাস করেন। তাদের পাশে দাঁড়াল সিটু পরিচালিত পরিযায়ী শ্রমিক ইউনিয়ন।
প্রায় বেশিরভাগ মানুষের বাড়িতেই জল ঢুকে যায়। কোনো বিকল্প না পেয়ে তাঁরা সেই জলের মধ্যেই রাত কাটাতে বাধ্য হন। রবিবার গভীর রাত থেকেই পরিযায়ী শ্রমিকরা পূর্ব ব্যাঙ্গালোরের সিটু ও পরিযায়ী শ্রমিক ইউনিয়নের সাথে যোগাযোগ করা শুরু করেন।
সোমবার সকালে পরিযায়ী শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃত্ব মুন্নিখোলালা ও ভার্থুরে বসবাসকারী পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রায় জলে ডুবে যাওয়া বসতি অঞ্চল ঘুরে দেখেন ও স্থানীয় পৌরসভা (বিবিএমপি)-র আধিকারিকদের সাথে যোগাযোগ করেন। সোমবার স্থানীয় পৌরসভার কাছে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য কিছু ত্রিপল ও দুবেলার খাবারের দাবী জানান পরিযায়ী শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা।
ইউনিয়নের সেই দাবী আংশিক পূর্ণ হয়। অপর্যাপ্ত ত্রিপল নিয়েই রাস্তার ধারে অস্থায়ী ছাউনি তৈরী করে নেন পরিযায়ী শ্রমিকরা, যাতে রাতে বৃষ্টি হলে ওই অঞ্চলের বাচ্চা ও মহিলারা অন্তত দাঁড়িয়ে রাত্রিযাপন করতে পারেন।
পশ্চিমবঙ্গ থেকে ব্যাঙ্গালোরে চিকিৎসা করতে আসা বহু রোগীর পরিবারই পূর্ব ব্যাঙ্গালোরের এই পরিযায়ী শ্রমিকদের বসতি অঞ্চলে এসে স্বল্পমূল্যে ঘর ভাড়া করে থাকেন। তাঁরাও এই বন্যা পরিস্থিতিতে আটকে পড়েন।
নদীয়ার তেহট্টের পূর্ব নওদা গ্রামের বাসিন্দা বাপ্পা দফাদার এরকমই এক অসুস্থ মানুষ। যিনি গত দু’বছর বিছানা ছেড়ে উঠতে পারেন না; তাঁর মা, স্ত্রী ও দুই ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে আটকে পড়েছেন ঘর ভর্তি জলের মধ্যে, বিছানা থেকে উঠে বেরিয়ে আসারও কোনো উপায় নেই।
সোমবার আংশিক দাবী আদায় করা গেলেও মঙ্গলবার স্থানীয় পুরসভার তরফ থেকে কিছু ত্রিপল ছাড়া আর কিছুই জোটেনি। এই চরম প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিজেপি পরিচালিত পৌরসভার পক্ষ থেকে কোনোরকম খাবারেরও ব্যবস্থা করা হয়নি। কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাহায্যে এই পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবারের হাতে খাবার তুলে দিতে সমর্থ হন পরিযায়ী শ্রমিক ইউনিয়ন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যে থেকে এই অঞ্চলে আবার প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়। ফলে সকাল থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় পরিযায়ী শ্রমিকদের বসতি অঞ্চলে যেটুকু জল কমেছিল, তার পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যায়।
পরিযায়ী শ্রমিকদের বসতি অঞ্চলের আশেপাশে ও রাস্তাঘাটে কোমর সমান জল জমে থাকায় পানীয় জলের সমস্যা দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যে থেকেই পরিযায়ী শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা স্থানীয় পুরসভার কাছে পরিযায়ী শ্রমিকদের অঞ্চলে পরিশ্রুত পানীয় জল ও তিনবেলা খাবারের বন্দোবস্ত করার দাবী জানাতে থাকে। বুধবার সেই দাবী আদায় হয়।
বুধবার সকালে ভার্থুর ও মুন্নিখোলালা অঞ্চলে বন্যা বিধ্বস্ত পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য টিফিন ও জলের ব্যবস্থা করে স্থানীয় প্রশাসন। এর পুরোটাই তত্ত্ববধান করেন সিটু, পরিযায়ী শ্রমিক ইউনিয়ন ও গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির নেতানেত্রীরা। এরপর স্থানীয় পুরসভার তরফে দুপুর ও রাতের খাবারের দাবীও মঞ্জুর হয়। স্থানীয় পুরসভার পাশাপাশি কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
পরিযায়ী শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে স্থানীয় পৌরসভাকে অবিলম্বে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য শিবিরের আয়োজন করার দাবী জানিয়েছে। এরপর জল নামলেই এই বসতি অঞ্চলে বিভিন্নরকম রোগের প্রাদুর্ভাব হবে। তাই আগে থেকেই এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করছে ইউনিয়ন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন