মঙ্গলবার উত্তরপ্রদেশের হাথরসে ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলাকালীন পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১২৬ জন পুণ্যার্থীর। সেই ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা সৎসঙ্গের ডাক দিয়েছিলেন নারায়ণ সাকার হরি ওরফে ভোলে বাবা। কে এই ভোলে বাবা? স্বঘোষিত এই ধর্মীয় গুরু দাবি করেন এক সময় তিনি গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করতেন।
উত্তরপ্রদেশের ইটা জেলার বাহাদুর নগরের বাসিন্দা তিনি। বাবা নান্নে লাল ছিলেন পেশায় কৃষক। স্বঘোষিত ভোলে বাবার আগে নাম ছিল সুরজ পাল। জানা যায়, উত্তরপ্রদেশ পুলিশের স্থানীয় গোয়েন্দা বিভাগের হেড কনস্টেবল ছিলেন তিনি। ভোলে বাবা দাবি করেন, কলেজে থাকাকালীন তিনি গোয়েন্দা বিভাগে যুক্ত হন। পরে ধর্মীয় বাণী প্রচারের জন্য নিজের চাকরী ছেড়ে দেন তিনি।
জানা যায়, ১৯৯৯ সালে চাকরী ছেড়ে দেন সুরজ। তারপর নিজের নাম পরিবর্তন করে রাখেন নারায়ণ সাকার হরি ওরফে ভোলে বাবা। ভোলে বাবার আরও একটি বৈশিষ্ট্য হল, তিনি তথাকথিত কমলা রঙের পোশাকের পরিবর্তে সাদা রঙের সুট এবং টাই পড়েন। এছাড়াও তিনি কুর্তা-পাজামা পড়ে থাকেন। সেটিও সাদা রঙের হয়।
এখন হরিয়ানা, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, রাজস্থান, দিল্লি-সহ গোটা ভারতে অসংখ্য ভক্ত ছড়িয়ে রয়েছে স্বঘোষিত এই ধর্মগুরুর। সমাজমাধ্যমে তাঁর কোনো অ্যাকাউন্ট নেই।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার হাথরসে সিকান্দরারাউ এলাকায় ভোলে বাবার সৎসঙ্গে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ১২৬ জনের। স্থানীয় সূত্রে খবর, ভোলে বাবার জন্য ‘মানব মঙ্গল মিলন সদ্ভাবনা অনুষ্ঠান কমিটি’র তরফে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ৩টে পর্যন্ত ওই সৎসঙ্গের আয়োজন করা হয়েছিল। পুলিশের দাবি, ওই অনুষ্ঠানে ৮০ হাজারের জমায়েতের অনুমতি থাকলেও, এসেছিলেন প্রায় আড়াই লক্ষ পুণ্যার্থী। বেশির ভাগই ছিলেন মহিলা ও শিশু।
অনুষ্ঠান শেষ হতেই মানুষ হুড়মুড়িয়ে ভোলে বাবাকে প্রণাম করতে যান। আর সেখানেই বাঁধে বিপত্তি। হুড়োহুড়িতে বহু মানুষ মাটিতে পড়ে যায়। বাকিরা তাঁদের উপর দিয়ে এগোনোর চেষ্টা করেন। যার ফলে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় ১২৬ জন পুণ্যার্থীর।
তবে এই প্রথম নয় । বারবার নিয়ম ভাঙার ইতিহাস আছে এই ধর্মগুরুকে ঘিরে। ২০২২ সালে করোনার সময় নিয়মের তোয়াক্কা না করে বিশাল ভক্ত সমাবেশ করেছিলেন এই ভোলেবাবা। নিষেধাজ্ঞা ভেঙে তাঁর বিরুদ্ধে সৎসঙ্গের আয়োজনের অভিযোগ উঠেছিল। সেই সময় যেখানে ৫০ জনের বেশি জমায়েত নিষিদ্ধ ছিল সারা দেশে, সেখানে তাঁর সৎসঙ্গে হাজির হয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ। প্রশাসন তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন