মঙ্গলবার উত্তরপ্রদেশের হাথরসে ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলাকালীন পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১২১ জন পুণ্যার্থীর। ধর্মীয় গুরু সুরজপাল সিং ওরফে নারায়ণ সাকার হরি ওরফে ভোলে বাবা যাঁর জন্য অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছিল, তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ সামনে আসছে। এমনকি যৌন কেলেঙ্কারির সাথেও যুক্ত বলে জানা যাচ্ছে।
হাথরসে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনায় তদন্ত যত এগোচ্ছে ভোলে বাবা সম্পর্কে একের পর এক নয়া তথ্য সামনে আসছে। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই গুরুর উত্তরপ্রদেশের মৈনপুরে ১৩ একর জমিতে বিলাসবহুল আশ্রম রয়েছে। যা যেকোনও ফাইভ স্টার হোটেলকে টেক্কা দিতে পারবে। যে জমিতে আশ্রম রয়েছে শুধুমাত্র সেটার দাম ৪ কোটি টাকা।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, আশ্রমের এক একটা ঘর রয়েছে যাতে ফাইভ স্টার হোটেলের মতো সমস্ত ব্যবস্থা রয়েছে। আশ্রমের নিজস্ব একটি রাস্তাও রয়েছে। সাথে অত্যাধুনিক ক্যাফেটেরিয়া রয়েছে আশ্রমের মধ্যেই। স্বঘোষিত ধর্মগুরু সুরজপালের জন্য আশ্রমে ছ'টি কক্ষ রয়েছে। পাশাপাশি সংগঠনের অন্যান্য সদসদ্য ও কর্মীদের জন্য আরও ছ'টি কক্ষ আছে।
যদিও সুরজপাল সিং-র দাবি, আশ্রমের জন্য জমিটি তাঁকে তিন থেকে চার বছর আগে উপহার দেওয়া হয়েছিল। এই আশ্রম ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কোটি কোটি টাকা মূল্যের জমিতে তাঁর আশ্রম রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
এই ভোলের বাবার জন্ম উত্তরপ্রদেশেই। তাঁর আসল নাম সুরজপাল সিং। ১৮ বছর উত্তরপ্রদেশ পুলিশের ইনটেলিজেন্স ইউনিট-র হেড কনস্টেবল পদে কাজ করেছিলেন। কিন্তু ১৯৯৭ সালে তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ ওঠায় চাকরি থেকে বরখাস্ত হন। জেল হেফাজতে ছিলেন তিনি। জেলে থেকে বেরিয়ে ধর্মীয় প্রচার শুরু করেন। সুরজপাল সিং-র বদলে নারায়ণ সাকার হরি নাম নিয়ে ধর্মীয় কাজ শুরু করেন। করোনার সময়ও সরকারি নির্দেশিকা অমান্য করে নির্ধারিত জনসংখ্যার বহুগুন বেশি মানুষের জমায়েত করেছিলেন এই ভোলে বাবা। এখন হরিয়ানা, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, রাজস্থান, দিল্লি-সহ গোটা ভারতে অসংখ্য ভক্ত ছড়িয়ে রয়েছে স্বঘোষিত এই ধর্মগুরুর।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার হাথরসে সিকান্দরারাউ এলাকায় ভোলে বাবার সৎসঙ্গে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় প্রায় ১২১ জনের। স্থানীয় সূত্রে খবর, ‘ভোলে বাবা’র জন্য ‘মানব মঙ্গল মিলন সদ্ভাবনা অনুষ্ঠান কমিটি’র তরফে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ৩টে পর্যন্ত ওই সৎসঙ্গের আয়োজন করা হয়েছিল। বুধবার ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজকদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে পুলিশ। কিন্তু স্বঘোষিত ধর্মগুরু ভোলে বাবার বিরুদ্ধে কোনও এফআইআর দায়ের হয়নি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন