"বিজেপির স্পষ্ট করা উচিত দেশের 'প্রাথমিক সংসদীয়' আসনে বিজেপি কর্মীরা ধর্ষণের জন্য বিশেষ ছাড় ও স্বাধীনতা পেয়েছে কি না?" বিএইচইউ গণধর্ষণের ঘটনায় তিন অভিযুক্তের মধ্যে দুই অভিযুক্তের ছাড়া পাওয়া প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে রবিবার একথা জানিয়েছেন অখিলেশ যাদব।
আরজি কর-এর আবহে শনিবার দিল্লির এক অনুষ্ঠানে গণধর্ষণের অপরাধীদের দ্রুত কড়া শাস্তির পক্ষে সওয়াল করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অন্যদিকে, তাঁরই লোকসভা কেন্দ্র বারাণসীতে এক ছাত্রীকে গণধর্ষণে অভিযুক্ত বিজেপির আইটি সেলের দুই নেতা জামিনে মুক্তি পেয়েছে গ্রেফতারের সাত মাসের মধ্যেই। এমনকি অভিযোগ উঠেছে, মুক্তির পর তাদের ফুল, মালা দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। এই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে সবর হয়েছে বিরোধীরা।
সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব এই ঘটনায় নিজের এক্স হ্যান্ডেলে (পূর্বতন ট্যুইটার) ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। গতকাল এক ট্যুইট বার্তায় অখিলেশ যাদব লেখেন - "বিএইচইউ গণধর্ষণের তিন অভিযুক্তের মধ্যে দুজনের জামিন পাওয়ার খবর, যারা বিজেপির আইটি সেলের কর্মকর্তা হিসাবে কাজ করেছিলেন, খুবই নিন্দনীয় এবং উদ্বেগজনক। প্রশ্ন হল, ধর্ষকদের আদালতে দুর্বল আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য কার চাপ ছিল?"
তিনি আরও বলেন, "দেশের কন্যাদের নিরাশ করার জন্য এটি একটি লজ্জাজনক বিষয় যে শুধুমাত্র এই ধর্ষকরাই বেরিয়ে এসেছেন তাই নয়, এমন খবরও রয়েছে যে বিজেপির ঐতিহ্য অনুসারে তাদের ফুলের মালা দিয়ে স্বাগত জানানো হয়েছে।"
অখিলেশ যাদব ওই ট্যুইটে বলেন, "বিজেপি কি দেশের বোন-কন্যাদের এই বিষয়ে কিছু বলতে চাইবে? আশা করি সত্যিকারের সাংবাদিক সমস্ত মহিলা অ্যাঙ্কররা অবশ্যই এই বিষয়ে তাদের নিজস্ব অনুষ্ঠান করবেন। এই অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়ে, আমরা সেই তথাকথিত 'সৎ' বিজেপি-সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের কাছ থেকেও বক্তব্য আশা করতে পারি।"
গত বছর বারাণসীর আইআইটি-বিএইচইউয়ের এক বি-টেকের ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল বিজেপির আইটি সেলের তিন সদস্য কুণাল পাণ্ডে, অভিষেক চৌহান এবং সক্ষম পটেলের বিরুদ্ধে। সে সময় নরেন্দ্র মোদী, যোগী আদিত্যনাথ, জেপি নাড্ডার মতো বিজেপির শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে এই তিন অভিযুক্তের ছবি প্রকাশ্যে আসে। এরপর অভিযুক্তদের মধ্যপ্রদেশে ভোট প্রচারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরে অবশ্য চাপে পরে পুলিশ ওই তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে।
জানা গেছে, সরকারি পক্ষের আইনজীবী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পাঁচটি ক্ষেত্রে কোনো তথ্য প্রমাণ দিতে পারেনি। তথ্য প্রমাণের অভাবে গত ২ জুলাই প্রথমে অভিষেক এবং পরে কুণালকে জামিন দেয় এলাহবাদ হাইকোর্ট। এরপর যোগী সরকারের পক্ষ থেকে জামিন খারিজ করার কোনো চেষ্টা করা হয়নি। ফলে গত ২৯ আগষ্ট জেল থেকে মুক্তি পায় ওই দুই অভিযুক্ত। অভিযুক্তরা ছাড়া পেতেই জেলের বাইরে ফুল-মালায় তাঁদের অভ্যর্থনা জানাতে দেখা যায় বিজেপি নেতাদের। এই ঘটনায় বিলকিস বানোর মামলায় অপরাধীদের অভ্যর্থনার ছবির সঙ্গে মিল খুঁজে পাচ্ছেন বিরোধীরা।
এই ঘটনায় সবর হয়েছে বিরোধীরা। মোদী এবং যোগীর বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার অভিযোগ এনেছে বিরোধী শিবির। এই ঘটনায় বারাণসীর কংগ্রেস নেতা অজয় রাই বলেন, ‘‘অন্য ক্ষেত্রে যোগী সরকার অভিযুক্তদের বাড়িতে বুলডোজ়ার চালায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বিজেপি ধর্ষকদের ফুল-মালা দিয়ে স্বাগত জানিয়েছে।’’
যদিও বিজেপির পক্ষ থেকে অভিযুক্তদের ফুল মালা দিয়ে স্বাগত জানানোর ঘটনা অস্বীকার করা হয়েছে। এক সংবাদমাধ্যমের ফ্যাক্ট চেকে জানানো হয়েছে, বাস্তবে ভাইরাল হওয়া ছবিটি সাম্প্রতিক নয়। এটি ১২ই জুলাই ২০২১-এ অভিযুক্ত সাক্ষম সিং প্যাটেলের জন্মদিনে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করা হয়েছিল। এই ঘটনায় অপর অভিযুক্ত সক্ষম সিংকে এলাহাবাদ হাইকোর্ট এখনও জামিন দেয়নি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন