স্বাধীনতার পর দেশের মধ্যে প্রথম 'জাত গণনা' শুরু হচ্ছে বিহারে (Bihar)। আর, তাতে তৃতীয় লিঙ্গকে 'জাত' হিসাবে চিহ্নিত করেছে বিহার সরকার। যা নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে।
১৯৩২ সালের পর ফের দেশে কোনও রাজ্যে জাত গণনা শুরু হতে যাচ্ছে। মূলত, সংরক্ষণের আওতায় পিছিয়ে পড়া বিভিন্ন সম্প্রদায়কে সুবিধা দিতে, এই গণনা শুরু করছে বিহার সরকার। যা নিয়ে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারকে আগেই দাবি জানিয়েছিল নীতিশ-তেজস্বী যাদবের জোট সরকার। কিন্তু, তা মানেনি বিজেপি সরকার। পরে, রাজ্যের উদ্যোগেই জাত গণনা শুরু করা হচ্ছে। এজন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা।
জানা যাচ্ছে, ১৫ এপ্রিল থেকে এটি চলবে ১৫ মে পর্যন্ত। এই জাত গণনায় বিভিন্ন জাতের জন্য আলাদা কোড নাম্বার করা হয়েছে। যেমন, যাদবদের কোড ১৬৭। রাজপুতের ১৬৯। ভূমিহারদের ১৪২। কায়স্থদের ২১ এবং 'তৃতীয় লিঙ্গ' সদস্যদের জন্য ২২। এখনও পর্যন্ত বিহারে ২১৫টি জাত বা কাস্টকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যার মধ্যে 'তৃতীয় লিঙ্গ'-কেও আলাদা জাত হিসাবে কোড নাম্বারসহ বিবেচিত করা হয়েছে।
যদিও, মৈথিল, কান্যকুব্জ এবং অন্যান্য ব্রাহ্মণদের উপ-শ্রেণিগুলিকে ব্রাহ্মণ নামে একটি একক সামাজিক সত্তায় অন্তর্গত করা হয়েছে। যার কোড নাম্বার রাখা হয়েছে ১২৬। এর উপ-শ্রেণিগুলির আলাদা কোনো গণনা করা হবে না।
আর, 'তৃতীয় লিঙ্গ'-কে আলাদা জাত হিসাবে বিবেচনা করার বিষয়টিকে 'অপরাধমূলক কাজ' বলে দাবী করেছেন বিহারের দোস্তানসাফার (Dostanasafar) নামে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পরিচালক রেশমা প্রসাদ (Reshma Prasad)।
সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে তিনি বলেন, 'একজন মানুষের লিঙ্গ পরিচয় কীভাবে তাঁর 'জাত' হতে পারে? একইভাবে 'পুরুষ' বা 'মহিলা'দের কি আলাদা জাত হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে? যদি তা না হয়, তাহলে কীভাবে 'তৃতীয় লিঙ্গ' (transgender)-কে জাত হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে? তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ যে কোনও বর্ণের হতে পারে।'
তিনি বলেন, এই পদক্ষেপটি 'ট্রান্সজেন্ডার পার্সনস (অধিকার সুরক্ষা) বিধি'র বিরুদ্ধে, যা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের অ-বৈষম্য প্রতিরোধের কথা বলে।
রেশমা প্রসাদ বলেন, 'রাজ্য সরকারের সমাজকল্যাণ বিভাগকে অবশ্যই এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে হবে, যাতে কোনও ব্যক্তির লিঙ্গ পরিচয়কে জাত হিসাবে বিবেচনা করা না হয়। আমি অবশ্যই এই বিষয়ে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে চিঠি লিখব এবং এই বিষয়ে তাঁর অবিলম্বে হস্তক্ষেপ চাইব। এটি তৃতীয় লিঙ্গ সম্প্রদায়ের লোকদের সাথে নিছক অন্যায়।'
জানা যাচ্ছে, ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে, বিহারে তৃতীয় লিঙ্গের মোট জনসংখ্যা ছিল ৪০,৮২৭ জন।
তবে শুধু রেশমা প্রসাদ নন, এই বিষয়ে মুখ খুলেছেন বিশিষ্ট ট্রান্সপারসন অধিকার কর্মী গ্রেস বানু (Grace Banu)। ফোনে পিটিআই-কে তিনি জানিয়েছেন, 'বিহার সরকারের এই পদক্ষেপ, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের প্রতি একটি 'সামাজিক অবিচার'। 'ট্রান্সজেন্ডার', যা একটি লিঙ্গ পরিচয়, তা কীভাবে জাত হিসাবে বিবেচিত হতে পারে? ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ে অনেক জাতি রয়েছে। রাজ্য সরকার (বিহার সরকার) যদি তৃতীয় লিঙ্গভুক্তদের গণনা করতে না জানে, তবে আমরা তাঁদেরকে সাহায্য করতে পারি।'
তিনি জানান, 'ন্যাশনাল লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটি (NALSA) বনাম ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়া (২০১৪) এর ঐতিহাসিক রায়ে, সুপ্রিম কোর্ট একটি যুগান্তরকারী ঘোষণায় বলেছে যে, ট্রান্সজেন্ডারদের তাদের অধিকার রক্ষার উদ্দেশ্যে 'তৃতীয় লিঙ্গ' হিসাবে গণ্য করা হবে। বিহার সরকারের এই সামাজিক অন্যায় অবিলম্বে সংশোধন করা দরকার.... একজন ব্যক্তির লিঙ্গকে মোটেই জাত হিসাবে বিবেচনা করা যায় না।'
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন