ঠিক কী কী কারণের ভিত্তিতে গুজরাটের বিজেপি সরকার বিলকিস বানোর ১১ জন ধর্ষককে মুক্তি দিয়েছে তা জানতে চেয়ে আরটিআই করা হয়েছিল। আরটিআই করেছিলেন তথ্যের অধিকার আন্দোলনের কর্মী পঙ্কটি যোগে। কিন্তু এই সকল তথ্য প্রকাশ্যে আনা সম্ভব নয় বলে স্পষ্ট জানিয়েছে গুজরাট সরকার। অর্থাৎ, 'ক্ষমা নীতি'র খতিয়ান পেশ করতে নারাজ নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য।
সূত্রের খবর, জেলবন্দি থাকাকালীন ১১ জন ধর্ষকের 'সুআচার-ব্যবহার'-এর কথা সরকার জানালেও, আরটিআই মারফত সম্পূর্ণ অন্য তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। কিন্তু মুক্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী প্যানেলের বৈঠকের আলোচ্য বিষয় নিয়ে কোনও তথ্য দিতে চায়নি গুজরাট সরকার।
অপরাধীদের মুক্তির বিরোধিতা করে মামলা দায়ের করা হয়েছিল শীর্ষ আদালতে। মামলা চলাকালীন গুজরাট সরকারকে বিভিন্ন নথিপত্র পেশ করার নির্দেশ দেয় আদালত। সেই নথিপত্র মারফত জানা গেছে,
১) অপরাধীদের মুক্তিতে সায় দিয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।
২) গুজরাত সরকারের দাবি, ১১ জন ধর্ষকই ১৪ বছর জেলবন্দি ছিল। কিন্তু আরটিআই-র তথ্যে দেখা গেছে, তাদের প্রায় সকলেই ১ হাজার দিনেরও বেশি প্যারোলে থাকার সুযোগ পেয়েছে।
৩) ১১ জনের মধ্যে ১০ জনই প্যারোলের নিয়মভঙ্গ করে নির্দিষ্ট দিনের চেয়ে অনেক দেরিতে জেলে ফিরেছে।
৪) ১০ দিন বা তার কম দেরি হলে তাদের সাবধান করা হয়েছে, কখনও এক মাসের জন্য ক্যান্টিনের সুবিধা কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
৫) বেশিরভাগ কয়েদি জেলে ফিরতে দেরি করলে তাদের ‘আর্নড রেমিশন’-এর সুবিধা স্থগিত করা হয়েছে। (দীর্ঘ সময়ের সাজাপ্রাপ্তরা জেলে নিয়মানুবর্তিতা পালনের বিনিময়ে মুক্তি এগিয়ে আনার সুবিধা পেয়ে থাকেন। তাকেই আর্নড রেমিশন বলা হয়)
৬) ১১ জন ধর্ষকের মধ্যে রাজুভাই বাবুলাল সোনি ২০১৫ সালে ১৯৭ দিন দেরিতে জেলে ফিরে ‘আর্নড রেমিশন’-এর সুবিধা হারিয়েছিল। যশবন্তভাই চতুরভাই রাওয়াল ৭৫ দিন দেরিতে ফিরে ৩৭৫ দিনের জন্য আর্নড রেমিশনের সুবিধা হারিয়েছে।
৭) শৈলেশ চিমনলাল ভাট, গোবিন্দ নাই সহ একাধিক সাজাপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে প্যারোলে থাকাকালীন বিলকিস মামলার সাক্ষীদের ভয় দেখানো এবং খুনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছর স্বাধীনতা দিবসের দিন 'ক্ষমা নীতি'র অধীনে ১১ জন ধর্ষককে মুক্তি দিয়েছে গুজরাট সরকার। শুধু তাই নয়, জেল থেকে বেরোনোর পর তাদের মালা পরিয়ে প্রকাশ্যে সম্বর্ধনা দিতে দেখা গেছে বিজেপি নেতাদের। ১১ জন ধর্ষকের মুক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ন্যায় বিচারের আশায় সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিলকিস। কিন্তু, গত শনিবার বিলকিসের পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করে ১১ ধর্ষক ও খুনির মুক্তির সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন