'অন্যায়ের বিরুদ্ধে আবার রুখে দাঁড়ানোর' ডাক দিলেন বিলকিস বানো। বৃহস্পতিবার, দীপ্ত কণ্ঠে তিনি বলেন, 'আমি আবার উঠে দাঁড়াবো, ন্যায়ের জন্য অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করবো।'
২০০২ সালে গোধরাকাণ্ডের সময় বিলকিস বানোকে গণধর্ষণ ও তাঁর পরিবারের সাত সদস্যকে খুন করা হয়। এরপর ন্যায় বিচার চেয়ে- প্রায় দু'দশকের বেশি সময় লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন বিলকিস বানো। যেখানে, ৭৬ তম স্বাধীনতা দিবসের দিন ১১ জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামীদের আগাম মুক্তি দিয়েছে গুজরাট সরকার।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের মে মাসে, বিলকিস বানোর ধর্ষকদের আগাম মুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন জানায় গুজরাটের বিজেপি সরকার। সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে ১১ জন ধর্ষককে আগাম মুক্তির অনুমতি দেয় শীর্ষ আদালত। সেই নির্দেশ পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়ে গত বুধবার (৩০ নভেম্বর), শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন বিলকিস। আদালতে এই সংক্রান্ত একটি রিট পিটিশন জমা দেন তাঁর আইনজীবী।
এরপর, ১ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) এক বিবৃতিতে বিলকিস বানো জানান- 'আবারও ন্যায়ের দরজায় কড়া নাড়বার সিদ্ধান্ত আমার জন্য সহজ ছিল না। যারা আমার পুরো পরিবার এবং আমার জীবনকে ধ্বংস করে দিয়েছে, তাদের (১১ জনের) মুক্তির পর আমি শক্তিহীন (অসাড়) হয়ে গিয়েছিলাম। সন্তানদের নিয়ে ভয়-আতঙ্কের মধ্যে ছিলাম আমি। এমনকি, সব আশা হারিয়ে প্যারালাইসিস হয়ে গিয়েছিলাম আমি।'
'কিন্তু, আমার এই নীরবতার সময় অনেকেই সরব হয়েছেন। তাঁরই হয়ে উঠেছে আমার কন্ঠ। অকল্পনীয় হতাশার মুখে তাঁরাই আমাকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আশার আলো দেখিয়েছে। একা বোধ করার কষ্ট কমিয়েছে। এই সমর্থন আমার কাছে কতটা মূল্যবান, তা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।'
এর আগে, গত ১৭ আগস্ট এক বিবৃতিতে বিলকিস বানো জানান, "গত দু'দিন আগে অর্থাৎ ১৫ আগস্ট ২০২২, আমাকে আমার বিগত ২০ বছরের ভয়ঙ্কর অতীত পুনরায় মনে করিয়ে দিয়েছে। যখন থেকে আমি শুনেছি যে ওই ১১ জন আসামী ছাড়া পেয়েছে, তখন থেকেই আমি নির্বাক এবং অসাড় হয়ে পড়েছি। ওরা আমার পরিবার এবং আমার জীবনকে ধ্বংস করে দিয়েছে এবং আমার থেকে আমার তিন বছরের মেয়েকেও কেড়ে নিয়েছে।'
তিনি বলেন, 'একজন নারীর অধিকারের জন্য লড়াই, তাঁর উপর হওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার এভাবে শেষ হতে পারে কী করে? আমি দেশের শীর্ষ আদালতের উপর আস্থা রেখেছিলাম। মানসিক আঘাত কাটিয়ে আবার ধীরে ধীরে বাঁচতে শিখছিলাম। আমার যন্ত্রণা এবং বিশ্বাস শুধু আমার একার ছিল না। এটি ছিল সেইসব মেয়েদের জন্য, যাঁরা আদালতে ন্যায়বিচার পাওয়ার আশায় ক্রমাগত লড়াই করছেন। অথচ, এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কেউ একবারও আমার নিরাপত্তা এবং ভালোভাবে বাঁচার কথা চিন্তাও করল না।'
গুজরাট গণধর্ষণকাণ্ডে মুক্তিপ্রাপ্ত আসামীরা হলেন - যশবন্ত নাই, গোবিন্দ নাই, শৈলেশ ভট্ট, রাধ্যেশ্যাম শাহ, বিপিন চন্দ্র জোশী, কেসারভাই ভোহানিয়া, প্রদীপ মোরধিয়া, বাকাভাই ভোহানিয়া, রাজুভাই সোনি, মিতেশ ভাট এবং রমেশ চন্দনা।
এই আসামীদের জেল থেকে বেরোনোর পর তাঁদের 'হিরো হিসাবে' মালা পরিয়ে স্বাগত জানানো হয়। সকলকে মিষ্টিমুখ করায় গেরুয়া শিবির।
২০০২ সালের ৩ মার্চ, বিলকিসকে গোধরাকাণ্ডে গণধর্ষণ করা হয়েছিল। তাঁর তিনবছরের মেয়ে সহ ১৪জনকে খুন করা হয়েছিল।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন