বিলকিস বানো গণধর্ষণ কাণ্ডে দোষীদের আগাম মুক্তি মামলায় সুপ্রিম কোর্টে বড় ধাক্কা খেল গুজরাট সরকার। মেয়াদ শেষের আগেই ১১ জন দোষীকে মুক্তি দিয়েছিল গুজরাট সরকার। বিজেপি শাসিত সরকারের সেই সিদ্ধান্তকে খারিজ করে দিল শীর্ষ আদালত। ২ সপ্তাহের মধ্যে দোষীদের আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
২০২২ সালের ১৫ আগস্ট বিলকিস বানো গণধর্ষণ কাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত ১১ জনকে সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই মুক্তি দিয়েছিল গুজরাট সরকার। সরকারের এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে একাধিক পিআইএল ফাইল হয়।
সোমবার বিচারপতি বি.ভি নাগারথনা এবং বিচারপতি উজ্জল ভূঁইয়ার বেঞ্চ স্পষ্ট জানায়, সংবিধানের ৩২ নম্বর অনুচ্ছেদের অধীনে আবেদনকারীর (বিলকিস বানো) দায়ের করা পিটিশন অবশ্যই রক্ষণাবেক্ষণযোগ্য।
বিচারপতিরা বলেন, "আমরা মনে করি দোষীদের মুক্তি দেওয়া হবে কিনা সেই সংক্রান্ত আবেদন গ্রহণ করা এবং দোষীদের সাজা মকুব করার কোনও ক্ষমতাই নেই গুজরাট সরকারের। এক্তিয়ার বহির্ভূত কাজ করেছে গুজরাট সরকার। কারণ ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৩২(৭) ধারা অনুযায়ী এই কাজের জন্য গুজরাট সরকার উপযুক্ত নয়। এই মামলার শুনানি মহারাষ্ট্রে হয়েছিল। অপরাধীদের মুক্তির ক্ষমতা একমাত্র মহারাষ্ট্র সরকারের আছে।"
বেঞ্চ আরও বলে, "সত্যতা লুকিয়ে এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য তৈরি করে, এক দোষী গুজরাট সরকারের কাছ থেকে তার মুক্তির বিষয়টি বিবেচনা করার নির্দেশ চেয়েছিলেন। আগাম মুক্তি বিবেচনা করার জন্য এই আদালত থেকে গুজরাট সরকারকে কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি। এটি একটি প্রতারণামূলক কাজ।“
আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে দোষীদের আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
প্রসঙ্গত, ২০০২ সালের ৩ মার্চ আহমেদাবাদের কাছে রন্ধিকপুর গ্রামে গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন বিলকিস বানো। সেই সময় তাঁর বয়স ছিল ২১ এবং তিনি পাঁচ মাসের গর্ভবতী ছিলেন। গোধরায় সবরমতি ট্রেনে সহিংসতার ঘটনা থেকে প্রাণে বাঁচতে পালিয়ে যাওয়ার সময় এই ঘটনা ঘটে। তাঁর সন্তান সহ তাঁর পরিবারের একাধিক সদস্যকে হত্যা করা হয়েছিল।
২০২২ সালের ১৫ আগস্ট ‘রেমিশন পলিসি’ অনুসারে এই ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত এগারো জনকেই মুক্তি দেয় গুজরাট সরকার। এই ঘটনায় দেশজুড়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ধর্ষক এগারো জনের মুক্তির পর বিশ্ব হিন্দু পরিষদের তরফ থেকে তাদের মালা দিয়ে সম্বর্ধনা জানানোর ছবি ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এমনকি যারা ধর্ষণ করেছিলেন তারা সকলেই ব্রাহ্মণ এবং তাদের ভালো সংস্কার রয়েছে বলে ধর্ষকদের পক্ষে সওয়ালও করেছিলেন বিজেপি বিধায়ক সি কে রাউলজী। যে ঘটনার প্রতিবাদে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ উগরে দেন নেটিজেনরা।
এই ঘটনায় জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন সিপিআইএম নেত্রী সুভাষিণী আলি, তৃণমূল নেত্রী মহুয়া মৈত্র, ন্যাশনাল ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান উইমেন, আসমা শফিক শেখ এবং অন্যরা।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন