ধর্ষকদের তার ঘনিষ্ঠরা মালা পরাতেই পারে। তাতে সমস্যা কোথায়? সুপ্রিম কোর্টে দাঁড়িয়ে এমনই মন্তব্য করলেন কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এস ভি রাজু।
মঙ্গলবার শীর্ষ আদালতে বিলকিস বানোর ধর্ষকদের মুক্তির বৈধতা মামলার শুনানি ছিল। ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার সময় বিললিস বানোকে গণধর্ষণ এবং তাঁর পরিবারের ৭ জনকে হত্যা করা হয়। গত বছর স্বাধীনতা দিবসের দিন বিলকিসের ১১ জন ধর্ষককেই মুক্তি দেয় গুজরাট সরকার। এরা সকলেই যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ছিল। এই মুক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিলকিস বানো।
দোষী সাব্যস্ত সাজাপ্রাপ্ত ধর্ষকরা জেল থেকে বেরোনোর পর তাদের মালা পরিয়ে স্বাগত জানানো হয়। মিষ্টিমুখ করানো হয়। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের তরফ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এমনকি রাজ্য এবং কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপির একাধিক অনুষ্ঠানেও ধর্ষকদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। বিলকিসের আইনজীবী শীর্ষ আদালতে দায়ের করা আবেদনে জানিয়েছিলেন, ধর্ষকদের মুক্তি এবং মুক্তির পরে তাদেরকে ঘিরে এই কর্মকাণ্ডে জনরোষের সৃষ্টি হয়েছে। এই নিয়ে সওয়াল-জবাব চলাকালীন কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল উপরিউক্ত মন্তব্যটি করেন।
বিচারপতি বিভি নাগারথনা এবং উজ্জল ভুঁইয়ার ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি চলছিল। সেখানে ধর্ষকদের মুক্তির বিরোধিতা করে দায়ের করা একটি পিটিশনের তরফ থেকে উপস্থিত ছিলেন প্রবীণ আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং। তিনি বিচারপতিদের বলছিলেন কিভাবে মুক্তির পর দোষীদের মালা পরিয়ে, মিষ্টি খাইয়ে অভিনন্দন জানানো হয়েছিল এবং বিজেপির তরফ থেকে দাবি করা হয়েছিল আসামিরা ব্রাহ্মণ, তারা কোনও অপরাধ করতেই পারে না।
তখনই অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এসভি রাজু বলেন, “যারা মুক্তিপ্রাপ্ত আসামিদের মালা পরিয়েছিলেন তারা তাদের পরিবারের সদস্য। পরিবারের সদস্য দ্বারা মালা পরানোতে দোষ কি? জেল থেকে ছাড়া পাওয়া একজনকে ফুল মিষ্টি দিয়ে সংবর্ধনা জানালে সমস্যা কোথায়?” সলিসিটর জেনারেলের এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র সমালোচনা শুরু হয়।
তবে শুনানিতে আদালত স্পষ্ট জানিয়েছে, জনরোষের উপর ভিত্তি করে বিচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় না। বেঞ্চ বলে, “আমরা শুধুমাত্র আইন বিশ্লেষণ করে নির্দেশ দেব এবং জনগণের ক্ষোভ দেখব না। ধরুন, কোনও জনরোষ নেই। তার মানে এই নয় যে আমরা আদেশ বহাল রাখব। আবার যদি তীব্র জনরোষ থাকে, তার মানেও এমন নয় যে এটা ভুল আদেশ?”
আগামী ৯ আগস্ট এই মামলায় সমস্ত পিআইএল আবেদনকারীদের যুক্তি শোনা হবে বলে জানিয়েছে আদালত।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন