নিট-নেট প্রসঙ্গে টানা তিনদিন লোকসভা অধিবেশন মুলতুবি থাকার পর ফের সোমবার থেকে শুরু হয়েছে অধিবেশন। এদিন অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ধন্যবাদ প্রস্তাব আলোচনা করতে গিয়ে বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করেন বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী। বলেন, ‘‘সংবিধানের ওপর লাগাতার আক্রমণ হয়ে আসছে। গোটা দেশে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেছে বিজেপি।’’
রাহুল সপ্তদশ লোকসভায় তাঁর সাংসদ পদ চলে যাওয়া নিয়ে এদিন বিজেপিকে নিশানা করে বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদীর কথায় আমার ওপর একাধিক মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। সাংসদ পদ কেড়ে নেওয়া হয়েছে। মানসিক অত্যাচার চলেছে।’’
এরপরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তথা বিজেপির সমস্ত নেতৃত্বদের হিন্দু ধর্ম নিয়ে প্রচারের প্রসঙ্গে টেনে এনে রাহুল এদিন সংসদে প্রথমে শিব ঠাকুরের একটি ছবি দেখায়। তারপর বলেন, ‘‘হিন্দু ধর্ম সহিষ্ণুতার কথা বলে। বিজেপি নিজেদের হিন্দু বলে কিন্তু তারা সব সময় হিংসার কথা বলে।’’ রাহুলের কথার পর লোকসভায় হট্টগোল শুরু হয়। রাহুলের পাল্টা প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘হিন্দু সমাজকে অসহিষ্ণু বলা অপরাধ।’’
এরপর সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে অযোধ্যায় বিজেপির হার প্রসঙ্গ টেনে এনে রাহুল বলেন, “বিজেপি ২৪ ঘন্টা ঘৃনা, হিংসা, ভয়ের কথা বলতে থাকে। অযোধ্যা বিজেপিকে জবাব দিয়েছে...’’ এরপরই মাইক বন্ধ হয়ে যায় রাহুলের। মাইক ফের চালু হওয়ার পর তিনি বলেন, ‘‘রাম জন্মভূমি বিজেপিকে বার্তা দিয়েছে। বিজেপি রাম মন্দিরের উদ্বোধন করেছে। সেখানে তারা হেরেছে। সমাজবাদী পার্টি জয়ী হয়েছে।’’
বিরোধী দলনেতার বক্তব্যে উঠে আসে কংগ্রেসের ভারত জোড়ো এবং ন্যায় যাত্রার কথা। তিনি বলেন, ‘‘যাত্রা চলাকালীন এক মহিলা আমাকে জানান তাঁর ওপর অত্যাচার করছেন তাঁর স্বামী কারণ তিনি তাঁকে খাবার দিতে পারেননি। তিনি খাবার দিতে পারেননি তাঁর কাছে টাকা ছিল না বলে।’’
এরপরে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সরাসরি মোদীকে নিশান করে রাহুল বলেন, ‘‘মূল্যবৃদ্ধির কারণে গোটা দেশের মানুষ ভয়ভীত।“ অগ্নিবীর প্রসঙ্গ টেনে রাহুল বলেন, ‘‘অগ্নিবীরের নাম করে দেশের যুবকদের মৃত্যুর মুখে দাঁড় করানো হচ্ছে। তাদের শহীদের সম্মান দেওয়া হয় না, ক্ষতিপুরন দেওয়া হয় না।’’
কৃষক আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘‘কৃষকদের জন্য নয়, আদানি আম্বানিদের জন্য কৃষি আইন তৈরি করেছিল বিজেপি সরকার। ৭০০ কৃষক শহীদ হয়েছেন, তাঁদের স্মরণে লোকসভায় মৌনতা পালন করতে দেননি। কৃষকরা বলেছিল এমএসপির আইনি বৈধতা দিতে হবে, তাদের ঋণ মুকুব করতে। সরকার তাতে রাজি হননি। কিন্তু কর্পোরেটদের ঋণ মুকুব করেছে এই সরকার।’’
মণিপুর প্রসঙ্গ টেনে মোদীকে নিশানা করে রাহুল বলেন, ‘‘মণিপুর জ্বলছে প্রধানমন্ত্রীর নীতির কারণে। একদিনের জন্য তিনি সেখানে যাননি।’’ মোদী আমলে বেকারত্বের হার সব থেকে বেশি। রাহুল বলেন, ‘‘দেশের যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারেনি সরকার। নোট বন্দির কারণে দেশের ছোট এবং মাঝারি ব্যবসায়ীরা সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।’’
নিট প্রসঙ্গে লোকসভার বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘‘নিটে একজন পড়ুয়া প্রথম স্থান পেতে পারে কিন্তু তার যদি পয়সা না থাকে সে ডাক্তার হতে পারবে না। গোটা শিক্ষা ব্যবস্থা বড়লোকদের জন্য। সাত বছরে ৭০ বার পেপার লিক হয়েছে। রাষ্ট্রপতি ভাষণে এই সব কথা আসে না। আমরা একদিন আলোচনা চেয়েছি সরকারের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে এই সমস্যার সমাধান করার। নিটের পড়ুয়ারা অনেক প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষায় বসে। আজ তাদের এই পরীক্ষার ওপর কোন আস্থা নেই।’’
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন