গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মাথা চাড়া দিয়েছে উত্তর ভারতের হরিয়ানাতে। রাজপুত ও গুর্জর সম্প্রদায়ের মধ্যে টানাপড়েনের জেরে ইতিমধ্যেই রাজপুত সম্প্রদায় অধ্যুষিত একাধিক গ্রামে বিজেপি নেতাদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে স্থানীয়রা। রাজ্যের একগুচ্ছ রাজপুত সম্প্রদায়ভুক্ত বিজেপি নেতা তাদের পদত্যাগপত্র জমা করেছেন রাজ্য-বিজেপির প্রধানের কাছে। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে এই অন্তর্দ্বন্দ্বে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে গেরুয়া শিবিরের।
এই সব কিছুর সূত্রপাত হয় রাজ্যের রাজপুত অধ্যুষিত কাইথাল জেলায় নবম শতাব্দীর রাজা সম্রাট মিহির ভোজ-এর একটি মূর্তি উন্মোচনকে ঘিরে। রাজপুতদের এলাকায় গুর্জর সম্প্রদায়ের ওই শাসকের মূর্তির উন্মোচন ও তার ফলকে ‘গুর্জর’ লেখা নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে রাজপুতদের মধ্যে। গত ২০ জুলাই কাইথালের বিজেপি বিধায়ক লীলা রাম গুর্জর এবং গুর্জর সম্প্রদায়ের কয়েকজন নেতা নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্যে ওই মূর্তির উন্মোচন করেন। তারপরেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে রাজপুতরা। কাইথাল জেলার বিভিন্ন গ্রামে যেকোনো বিজেপি নেতার প্রবেশেই জারি করা দেওয়া হয় নিষেধাজ্ঞা।
মূর্তি উন্মোচনের পরেই হরিয়ানা বিজেপির রাজপুত সম্প্রদায়ভুক্ত প্রায় ৪০ জন কর্মী তাঁদের পদত্যাগপত্র জমা করেন। রাজ্য বিজেপির প্রধান ওম প্রকাশ ধনখড় অবশ্য সেইসব পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেননি। আবার, রাজ্যের বিজেপি কিষাণ মোর্চার প্রধান সঞ্জীব রানা এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে এই নিয়ে জানিয়েছেন, “কাইথাল জেলার মোট ৪৭ জন রাজপুত সম্প্রদায়ের বিজেপি কর্মী এখনও পর্যন্ত পদত্যাগ করতে চেয়েছেন। কারনাল, যমুনানগর, ফরিদাবাদ-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে আরও বিজেপি কর্মী-নেতার পদত্যাগপত্র আসতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।”
তিনি আরও জানিয়েছেন, “শাহজাদপুর, লুখি, সুধপুর, পাবানা হাসানপুর, কাখেরি-সহ রাজ্যের একাধিক গ্রামে বিজেপি নেতাদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে স্থানীয় রাজপুত নেতারা। কোনও বিজেপি নেতা গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করলেই তাকে বাধা দিয়ে কালো পতাকা দেখানো হচ্ছে।”
বিক্ষোভকারী রাজপুত সম্প্রদায়ের মূলত ৪টি দাবি রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তাদের মতে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লালকে অবিলম্বে রাজপুত নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করে এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি, সম্রাট মিহির ভোজ-এর মূর্তির ফলক থেকে ‘গুর্জর’ কথাটি সরিয়ে দিতে হবে। বরখাস্ত করতে হবে কাইথালের বিজেপি জেলা সভাপতি অশোক গুর্জরকে। এবং কাইথালের বিজেপি বিধায়ক লীলা রাম গুর্জরের বিরুদ্ধেও কঠিন পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রসঙ্গত, হরিয়ানার মোট ভোটারদের প্রায় ৫ শতাংশ এই রাজপুত সম্প্রদায়ভুক্ত। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির তরফে চারজন রাজপুত নেতাকে ভোটের টিকিটও দেওয়া হয়। বর্তমানে, ওই সম্প্রদায় থেকে রাজ্যে দুজন বিধায়কও রয়েছেন যাদের মধ্যে একজন বিজেপি বিধায়ক এবং অন্যজন নির্দলীয়। অন্যদিকে, হরিয়ানা বিধানসভায় এই মুহূর্তে মোট ৬ জন গুর্জর সম্প্রদায়ভুক্ত বিধায়ক রয়েছেন। যাদের মধ্যে অন্যতম রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী কানওয়ারপাল গুর্জর। এছাড়াও ফরিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্র থেকে রয়েছেন সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী কৃষাণ পাল গুর্জর।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন