লোকসভায় বিশেষ অধিবেশন চলাকালীন বহুজন সমাজ পার্টির সাংসদ দানিশ আলিকে উদ্দেশ্য করে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক শব্দ ব্যবহার করলেন ভারতীয় জনতা পার্টির সাংসদ রমেশ বিধুরি। সংসদের কর্মপদ্ধতির নিয়ম অনুযায়ী সেই অপশব্দসমূহ সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচারও করা হয়েছে।
বসপা সাংসদকে ‘উগ্রবাদী’ ‘আতঙ্কবাদী’র মতো হিংসাত্মক শব্দ বলার পরেও বিজেপির তরফে বা সংসদের পক্ষ থেকে ওই বিজেপি সাংসদকে কোনও শাস্তি না দেওয়া নিয়ে প্রতিবাদে সরব হয়েছে কংগ্রেস। এই ঘটনায় সোশ্যাল মিডিয়ায় নিন্দার ঝড় তুলেছেন নেটিজেনরাও। যদিও বিধুরির ওই মন্তব্য নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং।
বৃহস্পতিবার লোকসভায় বিশেষ অধিবেশন চলাকালীন বক্তব্য রাখতে উঠেছিলেন ভারতীয় জনতা পার্টির দক্ষিণ দিল্লির সাংসদ রমেশ বিধুরি। তখনই তার কথার বিরোধীতা করায় বিএসপি সাংসদ দানিশ আলির উদ্দেশ্যে বিধুরি “উনি উগ্রবাদী, ও সন্ত্রাসবাদী” বলে আক্রমণ করেন।
পাশাপাশি, দানিশ আলিকে ‘মোল্লা আতঙ্কবাদী’ বলেও সম্বোধন করতে দেখা গিয়েছে ওই বিজেপি সাংসদকে। এরপরেও বসপা সাংসদ তার প্রতিবাদ না থামালে বিধুরিকে বলতে শোনা যায়, “বাইরে বের করুন এই মোল্লাকে”। শুধু তাই নয়, বিজেপি সাংসদ যখন এভাবে উস্কানিমূলক মন্তব্য করছেন, তখন তার পিছনে বসেই হাসতে দেখা যায় বর্ষীয়ান দুই বিজেপি সাংসদ রবিশঙ্কর প্রসাদ ও ডঃ হর্ষবর্ধনকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
বিজেপির তরফ থেকে এখনও পর্যন্ত সহিংস মন্তব্য করায় বিধুরির বিরুদ্ধে কোনোরকম পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এমনকি সংসদে বসে এধরণের ধর্মীয় হিংসামূলক মন্তব্য করায় লোকসভা থেকেও তাকে বরখাস্ত করা হয়নি। তবে লোকসভার সহ-দলনেতা তথা কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং ওই মন্তব্য নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, “ওই সাংসদের মন্তব্যে যদি বিরোধীরা আঘাত পেয়ে থাকেন, তাহলে আমি তার জন্য গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি।” রাজনাথ যদিও নিজে ওই মন্তব্য শোনেননি বলে জানিয়েছেন।
বিধুরির বিরুদ্ধে দল বা সংসদের তরফে কোনও পদক্ষেপ না নেওয়ায় কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা সরব হয়েছে। কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ জয়রাম রমেশ এই নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ করে জানিয়েছেন, “বিধুরি যা বলেছেন সেটা লজ্জার। রাজনাথ সিংও যে ক্ষমা চেয়েছেন সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, তিনি মন থেকে ক্ষমা চাননি। এই ক্ষমাও দেখানোর জন্য চাওয়া হয়েছে।”
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জয়রাম আরও জানিয়েছেন, “বিধুরি যে ভাষায় কথা বলেছেন সেটা শুধুমাত্র সংসদ ভবনের অপমান নয়, প্রত্যেক ভারতীয়র জন্যই অপমানজনক।” তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রও টুইটারে (বর্তমানে X) এই ঘটনায় লোকসভা স্পীকার ওম বিড়লা, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা ও ‘গদি-মিডিয়া’র প্রতিক্রিয়া চেয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন