গত কয়েকদিনে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ একাধিকবার সংবাদমাধ্যমে দাবি করেছেন তাঁর রাজ্যে অক্সিজেন, হাসপাতাল বেড, ওষুধ কোনো কিছুরই অভাব নেই। সবকিছুই পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর এই দাবিকে সরাসরি খারিজ করে দিলেন তাঁরই দলের এক সাংসদ। মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে সরকারি হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে রোগী মৃত্যু নিয়ে অভিযোগ জানালেন তিনি। সমস্ত অসুস্থদের জন্য অবিলম্বে অক্সিজেনের ব্যবস্থা না করলে ধর্নায় বসবেন বলে হুমকিও দিয়েছেন তিনি।
উত্তরপ্রদেশের মোহনলালগঞ্জের বিজেপি সাংসদ কৌশল কিশোর মুখ্যমন্ত্রীকে এই চিঠি লিখেছেন। করোনার কারণে সম্প্রতি নিজের বড় ভাইকে হারানো কৌশল কিশোর চিঠিতে জানিয়েছেন, লখনৌর সবথেকে বড় হাসপাতাল কিং জর্জ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর গত ৫ এপ্রিল করোনা আক্রান্ত হন এবং ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত কাজে আসতে পারেননি তিনি। এরপর অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে আগামী ৪ মে পর্যন্ত দীর্ঘ ছুটি নিয়েছেন তিনি।
কিশোরের অভিযোগ, প্রধান না থাকার জন্য রেসপিরেটরি-পালমোনারি বিভাগ ও ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিভাগ, কোভিড রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে যেই বিভাগগুলোর ভূমিকা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ, সেই বিভাগগুলো একেবারেই কাজ করেনি। এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে, অক্সিজেন সিলিন্ডার যুক্ত একশোটির বেশি শয্যা এবং রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের ৬টি আইসিইউ বেডের কথা উল্লেখ করেন তিনি, যা এই চরম সঙ্কটের মুহূর্তেও খালি রয়েছে। তিনি আরো বলেন, গত ২০ দিনে এই হাসপাতালে কতজন রোগী ভর্তি হয়েছেন এবং কতজনকে ডিসচার্জ করা হয়েছে তা খতিয়ে দেখলেই তাঁর তোলা অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হবে।
তাঁর আরও অভিযোগ, শুধু এই ক'দিনই নয়, গত এক বছরে কিং জর্জ হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডে কোনো ডিউটিই পালন করা হয়নি। চিকিৎসকরা রোগীর দেখভালের তুলনায় মিডিয়ার সাথে কথা বলতে বেশী আগ্রহী থাকেন। রোগীর যেটুকু চিকিৎসা করা হয় এখানে, তা জুনিয়র ডাক্তাররাই করেন।
কিং জর্জ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি ছাড়াও লখনৌর বলরামপুর কোভিড হাসপাতালের কথাও চিঠিতে উল্লেখ করেছেন বিজেপি সাংসদ। এই হাসপাতালে ২০টি ভেন্টিলেটর রয়েছে, যদিও এর মধ্যে মাত্র পাঁচটিই কাজ করে এবং বাইপ্যাপগুলো কাজই করছে না বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রীকে কিশোর জানিয়েছেন, সরকারি হাসপাতালে বেড খালি থাকা সত্ত্বেও যদি বেড ও অক্সিজেনের অভাবে রোগীরা মারা যান, তাহলে এর জন্য যাঁরা দায়ী, তাঁদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করা উচিত।
এর আগে রাজ্যের মন্ত্রী ব্রিজেশ পাঠকও রাজধানীর স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য অধিকর্তাদের চিঠি লিখেছিলেন।
আজ সকালে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক থেকে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, শেষ ২৪ ঘন্টায় উত্তরপ্রদেশে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৩৩ হাজার ৩৫১ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২৪৯ জনের। রাজ্যে সক্রিয় কেসের সংখ্যা ৩ লক্ষ ছাড়িয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন