'টাকা নিয়ে লোকসভায় প্রশ্ন' করার মামলায় তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রর বিরুদ্ধে এথিক্স কমিটির বহিষ্কারের প্রস্তাব ঘিরে শুরু হয়েছে ব্যাপক বিতর্ক। মহুয়ার পাশে দাঁড়িয়ে এথিক্স কমিটির এই সিদ্ধান্তকে এবং গোটা তদন্তের প্রক্রিয়াকে ‘পদ্ধতিগত ত্রুটি’ বলে উল্লেখ করেছেন বহুজন সমাজ পার্টির সাংসদ দানিশ আলি। অন্যদিকে, কমিটির চেয়ারম্যান তথা বিজেপি সাংসদ বিনোদ কুমার সোনকার পাল্টা কয়েকজন বিরোধী সাংসদের নামে ‘তদন্তে বাধা’ দেওয়ার অভিযোগ করেছেন।
দুবাইয়ের শিল্পপতি বন্ধু দর্শন হিরানান্দানির কাছ থেকে ‘টাকা নিয়ে’ লোকসভায় মোদী ‘ঘনিষ্ঠ’ আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলার অভিযোগ উঠেছে মহুয়া মৈত্রর বিরুদ্ধে। এমনকি মহুয়া তাঁর ব্যক্তিগত লোকসভা লগ-ইন আইডি দর্শনকে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ তোলা হয়েছে। সেই মামলায় বৃহস্পতিবার লোকসভার দশ সদস্যের এথিক্স কমিটি ৬:৪ ভোটে মহুয়াকে লোকসভা থেকে বহিষ্কারের প্রস্তাবে সায় দিয়েছে। কিন্তু সেই প্রস্তাবের ৫০০ পাতার খসড়া রিপোর্ট নিয়ে যথেষ্ট আপত্তি প্রকাশ করেছেন বসপা সাংসদ দানিশ আলি।
বৃহস্পতিবার এথিক্স কমিটির সিদ্ধান্ত প্রকাশিত হওয়ার পর সন্ধ্যায় এক সর্বভারতীয় সংবাদসংস্থাকে দানিশ জানিয়েছেন, “কমিটির চেয়ারম্যান (বিজেপি সাংসদ সোনকার) নিজেই বৈঠকে ১৫ মিনিট দেরিতে ঢুকেছেন। তার ঢোকার পর বৈঠক শুরু হয়ে মাত্র আড়াই মিনিটের মধ্যে সেই বৈঠক শেষ হয়ে গিয়েছে। রিপোর্ট নিয়ে কোনোরকম আলোচনাই হয়নি। একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে তদন্ত করার এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার এটাই কি সঠিক পথ? আমরা বিরোধী সাংসদরা প্রথমদিন থেকে এই পদ্ধতি নিয়ে আপত্তি তুলেছি। কিন্তু রিপোর্টে কোথাও প্রথমদিনের বৈঠকের কার্যবিবরণীর উল্লেখও নেই।”
দিল্লির বিজেপি সাংসদ রমেশ বিধুরির লোকসভায় ‘হিংসাত্মক মুসলিম বিরোধী’ মন্তব্যের কথা তুলে দানিশ আরও জানিয়েছেন, “রমেশ বিধুরি যেভাবে সংসদে বসে গণতন্ত্রের জন্য লজ্জাজনক মন্তব্য করেছিলেন, সেটা নিয়ে আলোচনার জন্য এথিক্স কমিটি তো কোনোরকম বৈঠকে বসেনি, কোনও কঠোর পদক্ষেপও নেওয়া হয়নি। কিন্তু এদিকে তৃণমূল সাংসদ একজন সরকার ঘনিষ্ঠ শিল্পপতিকে নিয়ে সংসদে প্রশ্ন তোলার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে দ্রুত কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” প্রসঙ্গত, গত সেপ্টেম্বরে এই বসপা সাংসদ দানিশের বিরুদ্ধেই সংসদে ‘মুসলিম বিরোধী হিংসাত্মক কুরুচিকর’ মন্তব্য করেছিলেন বিধুরি।
দানিশের এই অভিযোগের পাল্টা দিতে সময় নেননি এথিক্স কমিটির চেয়ারম্যান বিজেপি সাংসদ বিনোদ সোনকার। এক সর্বভারতীয় সংবাদসংস্থাকে তিনি জানিয়েছেন, “কমিটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন পেয়েই তৃণমূল সাংসদকে বহিষ্কারের প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। এই বিষয়ে আমরা সমস্ত প্রয়োজনীয় পদ্ধতি মেনেই কাজ করেছি। লোকসভার স্পিকারের কাছেও আমাদের সেই রিপোর্ট জমা করা হয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু মানুষ আছেন, যারা তদন্তে বাধা সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন। দানিশ আলি তাঁদের মধ্যে একজন।”
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন