যদি অবৈধ নির্মাণও হয় সে ক্ষেত্রেও আগামী ১ অক্টোবর পরবর্তী শুনানির আগে পর্যন্ত দেশের কোনও রাজ্য অথবা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে প্রশাসন বুলডোজার চালিয়ে কোনও নির্মাণ ভাঙতে পারবে না। এক্ষেত্রে কোনও যুক্তি দেওয়া যাবে না। তবে সরকারি রাস্তা, রেললাইনের ধার বা ফুটপাথ এবং জলাশয়ের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবেনা। শুধুমাত্র বেসরকারী নির্মাণের ক্ষেত্রেই এই নির্দেশ প্রযোজ্য হবে। মঙ্গলবার স্পষ্টভাবে এই নির্দেশ দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত। ২০২২ সালে প্রাক্তন রাজ্যসভা সাংসদ ও সিপিআইএম পলিটব্যুরো নেত্রী বৃন্দা কারাতও এই বিষয়ে এক আবেদন করেছিলেন।
মঙ্গলবার এক অন্তর্বর্তী নির্দেশে শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, বুলডোজার দিয়ে কোনও নির্মাণ ভাঙা, এমনকি তা যদি অবৈধও হয় তা আমাদের দেশের সংবিধানের ভাবনার পরিপন্থী। মঙ্গলবার এই নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি বি আর গাভাই এবং বিচারপতি কে ভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চ।
এদিন বেঞ্চ-এর পর্যবেক্ষণ অনুসারে, বুলডোজার দিয়ে কোনও কিছু ভেঙে দেওয়া আইনবিরুদ্ধ এবং কারোর অপরাধের সঙ্গে যোগ থাকলেই তার সম্পত্তি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেওয়া যায়না। এর আগে বিচারপতিরা সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাকে প্রশ্ন করেছিলেন, অভিযুক্ত হলেই কীভাবে একজনের বাড়ি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেওয়া যায়। ওই ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হলেও তা করা যায়না।
এদিন দুই বিচারপতির বেঞ্চ বিভিন্ন রাজ্যে অপরাধের মামলায় অভিযুক্তদের বাড়ি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেবার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে দায়ের করা পিটিশনের শুনানি করছিলেন। এর আগে ২ সেপ্টেম্বর এই মামলার শুনানি হয়। এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ১ অক্টোবর।
এদিন দুই বিচারপতির নির্দেশের বিরোধিতা করেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। তিনি বলেন, এভাবে সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষর (Statutory Authority) হাত বেঁধে দেওয়া যায়না। যদিও সলিসিটর জেনারেলের এই আপত্তিতে গুরুত্ব দিতে অস্বীকার করেন শীর্ষ আদালতের বিচারপতিরা। তাঁরা বলেন, যদি দু’সপ্তাহের জন্য বুলডোজার দিয়ে ভাঙা বন্ধ থাকে তাহলে কিছু আকাশ ভেঙে পড়বে না।
বেঞ্চ আরও জানিয়েছে ভারতীয় সংবিধানের ধারা ১৪২ অনুসারে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিচারপতি গাভাই বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই অবৈধ নির্মাণ নিয়ে আমরা কিছু বলছি না…কিন্তু কোনও আধিকারিক কখনই বিচারক হতে পারেন না।
২০২২ সালে বুলডোজার দিয়ে নির্মাণ ভাঙার বিরুদ্ধে একাধিক পিটিশন দাখিল হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। এই সময়েই দিল্লির জাহাঙ্গীরপুরীতে এক নির্মাণ ভাঙা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। যে ঘটনায় বুলডোজারের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে নির্মাণ ভাঙা আটকেছিলেন সিপিআইএম নেত্রী বৃন্দা কারাত। এর পরেই তিনি এই বিষয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন।
এদিনের আদালতের নির্দেশের ফলে মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থানের উদয়পুর থেকে দুই আবেদনকারী কিছুটা স্বস্তি পেলেন। উদয়পুরের ক্ষেত্রে এক ব্যক্তির ভাড়াটিয়ার ছেলে অপরাধের সঙ্গে জড়িত বলে তার বাড়ি ভেঙে দেবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
সাম্প্রতিক সময়ে উত্তরপ্রদেশে একাধিক নির্মাণ ভাঙা হয়েছে বুলডোজার দিয়ে। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে কেউ কেউ 'বুলডোজার বাবা'ও বলে থাকেন। একইভাবে মধ্যপ্রদেশের শিবরাজ সিং চৌহানও বুলডোজার দিয়ে একাধিক অভিযুক্তের নির্মাণ ভেঙেছেন বলে অভিযোগ আছে। এই ধরণের ঘটনা ঘটেছে দিল্লি, রাজস্থান সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন