দেশের চতুর্থ বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক কানাড়া ব্যাঙ্ক (Canara Bank)। গত ১১ বছরে এই ব্যাঙ্ক দেশের বড় বড় শিল্পপতিদের ১.২৯ লক্ষ কোটি টাকা অনাদায়ী ঋণ মকুব করেছে। এক RTI-এর জবাবে একথা জানা গেছে। জানা যাচ্ছে, যেসব শিল্পপতি কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকার উপর ঋণ নিয়েছে, তাঁদের অনাদায়ী ঋণ মকুব করেছে কানাড়া ব্যাঙ্ক।
তবে, কোন কোন শিল্পপতি বা প্রতিষ্ঠানের অনাদায়ী ঋণ মকুব করা হয়েছে, তা প্রকাশ করতে চায়নি কানাড়া ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি, কানাড়া ব্যাঙ্কের অনাদায়ী ঋণ মকুবের খতিয়ান জানতে চেয়ে RTI করেছিলেন পুনের সমাজকর্মী বিবেক ভেলঙ্কর। কিন্তু, তাঁর আবদেনের পরেও ঋণ মকুব করা শিল্পপতিদের নাম প্রকাশ করতে চায়নি কানাড়া ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ।
তবে, কানাড়া ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে যে তথ্য পেয়েছেন ভেলঙ্কর, তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০১১-১২ আর্থিক বছর থেকে ২০২১-২২ আর্থিক বছরের মধ্যে (গত ১১ বছরে) ধাপে ধাপে ঋণ মকুবের পরিমাণ বেড়েছে।
২০১১-১২ আর্থিক বছরে অনাদয়ী ঋণ মকুব করা হয়েছে ৩৯৭ কোটি টাকা।
২০১২-১৩ আর্থিক বছরে অনাদয়ী ঋণ মকুব করা হয়েছে ৯৫০ কোটি টাকা।
২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে অনাদয়ী ঋণ মকুব করা হয়েছে ১ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা।
২০১৪-১৫ আর্থিক বছরে অনাদয়ী ঋণ মকুব করা হয়েছে ১ হাজার ৭৪৮ কোটি টাকা।
২০১৫-১৬ আর্থিক বছরে অনাদয়ী ঋণ মকুব করা হয়েছে ৩ হাজার ৩২২ কোটি টাকা।
২০১৬-১৭ আর্থিক বছরে অনাদয়ী ঋণ মকুব করা হয়েছে ৫ হাজার ৩১২ কোটি টাকা।
২০১৭-১৮ আর্থিক বছরে অনাদয়ী ঋণ মকুব করা হয়েছে ৯ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা।
২০১৮-১৯ আর্থিক বছরে অনাদয়ী ঋণ মকুব করা হয়েছে ১৯ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা।
২০১৯-২০ আর্থিক বছরে অনাদয়ী ঋণ মকুব করা হয়েছে ২৩ হাজার ৫১ কোটি টাকা।
২০২০-২১ আর্থিক বছরে অনাদয়ী ঋণ মকুব করা হয়েছে ৩১ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা।
২০২১-২২ আর্থিক বছরে অনাদয়ী ঋণ মকুব করা হয়েছে ৩২ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা।
প্রসঙ্গত, দেখা যাচ্ছে ২০১৪ সালে মোদী সরকার ক্ষমতায় ফেরার পর শিল্পপতি বা কর্পোরেটদের ঋণ মকুবের পরিমাণ লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। ২০২০ সালের এপ্রিলে মোদী সরকারের নির্দেশেই কানাড়া ব্যাঙ্ক ও সিন্ডিকেট ব্যাঙ্কের সংযুক্তি হয়।
জানা যাচ্ছে, "যেভাবে তথ্য চাওয়া হয়েছে RTI-এ, সেভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না"- এই অজুহাত তুলে ১০০ কোটি টাকার উপর ঋণ খেলাপিদের নাম, ঠিকানা, অর্থের প্রকৃত পরিমাণের তথ্য শেয়ার করতে অস্বীকার করেছে কানাড়া ব্যাঙ্ক।
শুধু তাই নয়, ১ কোটি টাকার নীচে যাদের ঋণ মকুব করা হয়েছে, তাঁদের নামও প্রকাশ করতে চাননি কানাড়া ব্যাঙ্কের সেন্ট্রাল পাবলিক ইনফরমেশন অফিসার (CPIO)।
এ প্রসঙ্গে, RTI কর্মী ও সজাগ নাগরিক মঞ্চের সভাপতি (Sajag Nagrik Manch) ভেলঙ্কার প্রশ্ন তুলেছেন, 'যখন একজন সাধারণ মানুষের ঋণ খেলাপি হয়, তখন একই ব্যাঙ্ক তাঁর নাম-ঠিকানা প্রকাশ করে বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। অথচ, যেসব শিল্পপতিদের বিপুল অঙ্কের অনাদায়ী ঋণ মকুব করা হচ্ছে, তাঁদের নাম গোপন করছে ব্যাঙ্ক। কী কারণে এই গোপনীয়তা? এই গোপনীয়তা আইনের কোন ধারার মধ্যে পড়ে? আর, সাধারণ ঋণগ্রহীতাদের নাম প্রচার করার সময় কেন 'গোপনীয়তা' ধারা প্রযোজ্য হয় না?'
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন