বৃহস্পতিবার কেন্দ্রের তরফে রাজ্যসভায় একটি বিশেষ বিল পেশ করা হয়। যেখানে প্রস্তাব দেওয়া হয়, দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করবেন স্বয়ং ভারতের রাষ্ট্রপতি। কিন্তু রাষ্ট্রপতির ওই সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে ৩ সদস্যের একটি বিশেষ কমিটির পরামর্শের উপরে। কিন্তু যেখানে সুপ্রিম কোর্টও ওই কমিটিতে দেশের প্রধান বিচারপতির থাকা বাধ্যতামূলক বলে নির্দেশ দিয়েছিল, সেখানে মোদী সরকারের প্রস্তাবিত বিলে প্রধান বিচারপতির বদলে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার একজন মন্ত্রীকে রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার এই বিল সম্পর্কিত ২০১২ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে লেখা বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবানির একটি চিঠি সমাজমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশ। কী রয়েছে ওই চিঠিতে?
এককালের হেভিওয়েট বিজেপি নেতা তথা দেশের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আডবানির চিঠিতে বলা হয়েছিল, দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ করবে একটি বিশেষ কমিটি। যার নেতৃত্বে থাকবেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। এছাড়াও ওই কমিটিতে থাকবেন দেশের প্রধান বিচারপতি, কেন্দ্রীয় আইন ও বিচারমন্ত্রী, লোকসভা ও রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা। ওই কমিটির সিদ্ধান্তের উপর শিলমোহর দেবেন রাষ্ট্রপতি।
কিন্তু বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় কেন্দ্রের পেশ করা বিলে জানানো হয়েছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের বিষয়ে শেষ কথা রাষ্ট্রপতিই বলবেন। কিন্তু তাকে এই ব্যাপারে পরামর্শ দেবে যে কমিটি, সেই কমিটিতে থাকবেন মাত্র ৩ জন সদস্য। যার মধ্যে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার বিরোধী দলনেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচিত একজন মন্ত্রী। অর্থাৎ কেন্দ্রের প্রস্তাবিত বিলে ওই কমিটি থেকে পুরোপুরি বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে দেশের প্রধান বিচারপতি ও রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতাকে।
প্রসঙ্গত, গত মার্চ মাসে এই প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টও ওই কমিটিতে প্রধান বিচারপতির থাকা বাধ্যতামূলক বলে রায় দিয়েছিল। কেন্দ্রের এই বিল দেশের শীর্ষ আদালতের রায়কেও অমান্য করেছে। আর এই নিয়েও সরব হয়ে মোদী সরকারকে তীব্র কটাক্ষ করেছে কংগ্রেস।
শুক্রবার কং সাংসদ জয়রাম রমেশ আডবানির ওই এক দশক পুরনো চিঠি সমাজমাধ্যমে শেয়ার করে বলেছেন, “মোদী সরকারের প্রস্তাবিত এই নয়া CEC বিল শুধুমাত্র এল কে আডবানির প্রস্তাবনাকেই লঙ্ঘন করেনি। অমান্য করেছে গত ২ মার্চ ২০২৩-এ সুপ্রিম কোর্টের ৫ বিচারপতির বেঞ্চের দেওয়া রায়কেও।”
প্রসঙ্গত, বর্তমান মুখ্য নির্বাচন কমিশনার অনুপ চন্দ্র পাণ্ডে আগামী বছরের লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে ৬৫ বছর বয়সে ১৪ ফেব্রুয়ারি অবসর নেবেন। তারপরেই ওই পদে শূন্যস্থান তৈরি হবে। আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগেই মোদী সরকার নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক কাঠামোকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে বলে এদিন অভিযোগ করেন রমেশ।
বৃহস্পতিবার ওই বিল নিয়ে বিরোধীদের তুমুল বিক্ষোভের পরেও রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকড় কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়ালকে ওই CEC বিল পেশের অনুমতি দেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন