ক্রেতা না পাওয়ার জন্য লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ত তৈল সংস্থা ভারত পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (BPCL)-র শেয়ার বিক্রির প্রক্রিয়া আপাতত প্রত্যাহার করল কেন্দ্রীয় সরকার। এর আগেও রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান সংস্থা পবন হংসকে বেসরকারীকরণের উদ্যোগ নিয়েছিল কেন্দ্র। কিন্তু সেই প্রস্তাবও স্থগিত হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে বিপিসিএল শেয়ার বিক্রির প্রস্তাব প্রত্যাহার করল মোদী সরকার।
বিপিসিএল (ভারত পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন লিমিটেড)-এর শেয়ার কিনতে আগ্রহীদের বক্তব্য অনুযায়ী, সারা বিশ্বের জ্বালানি বাজারের পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বেগজনক অবস্থায় রয়েছে। যার ফলে এই মূহূর্তে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা কেনা সম্ভবপর হচ্ছে না।
দেশের বেশিরভাগ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বেসরকারীকরণের পথে চলছে কেন্দ্র। তার মধ্যে বিপিসিএল-এর ৫২.৯৮% অংশীদারিত্ব বেসরকারী হাতে তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা ছিল মোদী সরকারের। যে কারণে শেয়ার বিক্রির জন্য আগ্রহী ক্রেতাদের ২০২০ সালের মার্চ মাসে মধ্যে আগ্রহপত্র জমা দিতে বলা হয়। তিনটি সংস্থা আগ্রহ পত্র জমা দেয়। পরে কোভিডের জন্য একাধিকবার আগ্রহ পত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা বাড়ানো হয় কেন্দ্রের তরফে।
কিন্তু এরপরই বিভিন্ন সমস্যা শুরু হয়। খোলা বাজারে জ্বালানির অস্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে তিন ক্রেতা সংস্থা। তাদের মধ্যে দুটি সংস্থা পিছিয়ে যায়। যার ফলে কেন্দ্রের এই বেসরকারীকরণ প্রচেষ্টা কার্যত ব্যর্থ হতে পারে বলে সরকারের শীর্ষস্তর মারফত ইঙ্গিত মিলছিল বহুদিন যাবৎ। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক সরকারি সূত্রের বক্তব্য, সম্ভাব্য ক্রেতাদের মধ্যে দুটি সংস্থা সরে যাওয়ার ফলে বেসরকারীকরণ আপাতত স্থগিত বলে ধরা যেতে পারে। একটিমাত্র ক্রেতা নিয়ে বেসরকারী প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়া অর্থহীন।
সরকারি সূত্রের তরফে আরও বলা হয়। "বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দামের ঘোর অনিশ্চয়তা এবং সর্বোপরি অভন্ত্যরীণ বাজারে দাম নির্ধারণে অস্বচ্ছতার কারণেই বিপিসিএল-এর দরদাতা সংস্থাগুলি আগ্রহ হারিয়েছে।" তাঁরা আরও বলেন, "ভারতে পেট্রোল ও ডিজেলের বাজারের ৯০ শতাংশই নির্ধারণ করে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানিগুলি।"
পাশাপাশি বিপিসিএল-এর তিন দরদাতার অন্যতম বেদান্ত গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান অনিল আগরওয়াল কিছুদিন আগে বলেন, "বিপিসিএল-এর শেয়ার বিক্রির জন্য বর্তমান প্রস্তাবটি বাতিল করতে পারে সরকার। নয়া পরিকল্পনা নিয়েই ফিরে আসতে হবে সরকারকে।"
যদিও এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের দাবি, বেসরকারীকরণ প্রত্যাহার করা ছাড়া কেন্দ্রের কাছে আর কোনো উপায় নেই। কারণ, এই মুহূর্তে জ্বালানির বাজারের পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বেগজনক। বিশ্বের বাজার থেকে তেল কিনতে বহু সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে তেল সংস্থাগুলি। দেশের বাজারে তেলের দাম আকাশছোঁয়া হওয়ার ফলে বিকল্প জ্বালানি খুঁজছে সাধারণ মানুষ। শেয়ার বাজারের পরিস্থিতি বিচার করেই তিন ক্রেতা সংস্থা পিছিয়ে পড়েছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দেশের মধ্যে ইন্ডিয়ান অয়েলের পরেই দ্বিতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত্ব তেল বিপনন কোম্পানি হিসেবে আছে বিপিসিএল-এর নাম। মুম্বাই, মহারাষ্ট্র এবং কোচিতে এর তৈল শোধনাগার আছে। তৈল শোধন ক্ষমতায় দেশের মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম কোম্পানি এটি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন