তথ্য প্রযুক্তি বিধি (২০২১) এ সংশোধন আনল কেন্দ্র সরকার। এই সংশোধনী অনুযায়ী, সোশ্যাল মিডিয়ায় কেন্দ্র সরকার সম্পর্কে উপস্থাপিত কোনও তথ্য ‘ভুয়ো’ বা ‘মিথ্যা’ বা ‘বিভ্রান্তিকর’ কিনা যাচাই করতে একটি সংস্থা তৈরি করবে কেন্দ্র সরকার। সেই সংস্থা যদি মনে করে ওই তথ্য ‘ভুয়ো’ বা ‘বিভ্রান্তিকর’, তাহলে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে তা তুলে দিতে হবে। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছে বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং সাংবাদিকদের সংগঠনগুলি।
কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে খানিকটা চুপিসারেই এই সংশোধনী আনা হয়েছে। কারণ তথ্য প্রযুক্তি আইনে রদবদল করতে হলে সংসদে আলোচনার প্রয়োজন হয়, সংসদের অনুমোদন লাগে। এক্ষেত্রে তা করা হয়নি। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ইলেকট্রনিকস ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রকের তরফ থেকে এক নোটিস জারি করে সংশোধনীর বিষয়ে জানানো হয়েছে।
নোটিসের বেশির ভাগ অংশই ছিল অনলাইন গেমিং সংক্রান্ত। ফ্যাক্ট চেক নিয়ে মাত্র দুটি প্যারা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকার সম্পর্কে কোনো ভুয়ো বা বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ করতে পারবে না কোনো ‘ইন্টারমিডিয়ারি’। এমন কোনো তথ্য শেয়ারও করা যাবে না। একইসঙ্গেই বলা হয়েছে, কোন তথ্য ভুয়ো, অসত্য বা বিভ্রান্তিকর তা স্থির করার জন্য ইলেকট্রনিকস ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রকের অধীনে একটি সংস্থা গঠন করবে সরকার। সেই সংস্থা যদি মনে করে ওই তথ্য ‘ভুয়ো’ বা ‘বিভ্রান্তিকর’, তাহলে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে তা তুলে দিতে হবে।
এই প্রসঙ্গে ইলেকট্রনিকস ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর সংবাদসংস্থা পিটিআই-কে বলেছেন, ‘একটি ফ্যাক্ট চেক ইউনিট তৈরি করবে সরকার। এই ফ্যাক্ট চেক ইউনিট সরকার সম্পর্কিত সমস্ত অনলাইন তথ্য পরীক্ষা করবে।‘ তিনি আরও বলেন, গুগল, ফেসবুক, টুইটারের মতো ইন্টারনেট সংস্থা যদি সরকারের চিহ্নিত ওই কনটেন্ট সরিয়ে না দেয় তাহলে তারা ‘সুরক্ষা’ পাবে না।
এই নোটিশের তীব্র নিন্দা করেছে এডিটর্স গিল্ড অব ইন্ডিয়া । এক বিবৃতিতে এডিটর্স গিল্ড বলেছে, সোস্যাল মিডিয়ায় কেন্দ্র সংক্রান্ত কোনও পোস্ট ‘ভুয়ো’ বা ‘মিথ্যা’ বা ‘বিভ্রান্তিকর’ কি না, এই সংশোধনীর মাধ্যমে সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার চরম ক্ষমতা নিজেই নিজেকে দিল সরকার। সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে কোথাও উল্লেখ করা হয়নি, সোস্যাল মিডিয়ায় পোস্টের সত্যতা যাচাই করার সরকারি পদ্ধতি বা কাঠামো কী হবে। এই সবই ন্যায়বিচারের নীতির পরিপন্থী এবং সেন্সরশিপের সমতুল্য। দেশের সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার উপরে গভীর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এই সংশোধনী। এই সংশোধনীর মধ্য দিয়ে দানবীয় বিধি আরোপ করা হয়েছে। এখনই তা প্রত্যাহার করে নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে সরকারকে।
সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক এই সংশোধনী এখনই প্রত্যাহার করার দাবিও জানিয়েছে সিপিআইএম পলিটব্যুরো। এক বিবৃতিতে পলিটব্যুরো বলেছে, এই সংশোধনীর মাধ্যমে অপছন্দের পোস্ট হলেই নাগরিকদের বিরুদ্ধে একতরফা সেন্সরশিপ প্রয়োগের ব্যবস্থা করেছে মোদী সরকার।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন