শেষ মুহূর্তে মন বদল মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন. বীরেন সিংয়ের। মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে গিয়েও শেষ মুহূর্তে সেই ইচ্ছা দমন করেন তিনি। ছিঁড়ে ফেলা হয় তাঁর পদত্যাগপত্রও।
প্রসঙ্গত, প্রায় দুমাস ধরে মেইতেই ও কুকি জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষে উত্তপ্ত মণিপুর। ইতিমধ্যেই ১০০-এরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং আশ্রয় হারিয়েছেন ৩৫ হাজারেও বেশি। বিরোধীদের অভিযোগ, বীরেন সিংয়ের নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার আইনশৃঙ্খলা বজায় রেখে শান্তি ফেরাতে চূড়ান্ত ব্যর্থ। মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে বীরেন সিংয়ের ইস্তফা দেওয়ার দাবীও বহুবার উঠেছে।
বিরোধীদের দাবি মেনে ও রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে শুক্রবার রাজভবনে গিয়ে মণিপুরের রাজ্যপাল অনুসূইয়া উইকেই-এর হাতে নিজের পদত্যাগপত্র তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং। এদিন ইম্ফলে নিজের বাসভবন থেকে রাজভবনের উদ্দেশ্যে বেরতে গিয়েই অবশ্য বাধা পান তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে এদিন সকাল থেকেই শতাধিক মহিলা সমর্থক জড়ো হয়ে বিশাল মানববন্ধন তৈরি করে। বীরেন সিং তাঁর বাসভবন থেকে বেরতে গেলে তাঁকে ঘিরে পদত্যাগ না করার আবেদন জানান তারা। রাজ্য জুড়ে অশান্ত পরিস্থিতি থাকার পরেও এত মানুষের সমর্থন পেয়ে আপ্লুত হয়ে শেষ মুহূর্তে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেওয়া থেকে বিরত থাকেন বীরেন সিং, এমনটাই জানিয়েছেন তাঁর মন্ত্রিসভার এক বর্ষীয়ান মন্ত্রী। এর পাশাপাশি, রাজ্যপালের উদ্দেশ্যে লেখা বীরেন সিংয়ের পদত্যাগপত্রও ছিঁড়ে ফেলা হয়।
অন্যদিকে, এই মুহূর্তে ২ দিনের সফরে এখনও পর্যন্ত মণিপুরেই রয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। প্রথম জাতীয় স্তরের বিরোধী নেতা হিসেবে অশান্ত মণিপুরে শান্তির বার্তা দিতে গত বৃহস্পতিবারই মণিপুরে পৌঁছন রাহুল। শুক্রবার প্রাক্তন কংগ্রেস প্রধান ইউনাইটেড নাগা কাউন্সিল (ইউএনসি) নেতৃত্বের মতো রাজনৈতিক সম-মনস্ক বিরোধী নেতৃত্বদের সঙ্গে ইম্ফলে নিজের হোটেলে বৈঠক করবেন বলে জানিয়েছেন মণিপুর কংগ্রেসের সভাপতি কেইশাম মেঘাচন্দ্র।
তবে মণিপুরে থাকাকালীন বিরোধীদের নিয়ে কোনওরকম রাজনৈতিক মন্তব্য করবেন না বলেই সাফ জানিয়ে দিয়েছেন রাহুল। অশান্ত মণিপুর সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নীরবতা নিয়ে মণিপুরের সাংবাদিকরা তাঁকে প্রশ্ন করলে প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ জানান, “কোনওরকম রাজনৈতিক মন্তব্য করতে আমি এখানে আসিনি। এইসব নিয়ে আমি এই মুহূর্তে কোনও মন্তব্য করব না। আমি শুধু চাই যত দ্রুত সম্ভব মণিপুরে শান্তি ফিরে আসুক।”
বৃহস্পতিবার উত্তর-পূর্ব ভারতের ওই রাজ্যে গিয়েই একাধিক ত্রান শিবির ঘুরে দেখেন রাহুল। এ নিয়ে তিনি জানিয়েছেন, “রাজ্য জুড়ে সংঘর্ষে অনেক মানুষ তাদের কাছের মানুষ আর আশ্রয় হারিয়েছেন। ওদের এই বিশাল ক্ষতি আমি নিজের চোখে দেখলাম। ওদের সঙ্গে কথাও বলেছি। এই ঘটনা খুবই হৃদয়বিদারক। এখানে প্রত্যেক ভাই-বোন আর শিশুর মুখে সাহায্যের কান্না দেখতে পেয়েছি। এখন সবচেয়ে জরুরী হল মানুষের জীবন ও জীবিকা বাঁচানোর জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রাজ্যে শান্তির পরিবেশ ফিরিয়ে আনা। সেই লক্ষ্যে আমাদের সবার একসঙ্গে চেষ্টা করা উচিত।”
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন