মণিপুর হিংসা নিয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁকে সংসদে এই বিষয়ে মন্তব্য করতে হবে। শনিবার কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এই দাবি জানানো হয়েছে। দিল্লিতে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় শনিবার একথা জানিয়েছেন কংগ্রেসের রাজ্যসভা সাংসদ রঞ্জিত রঞ্জন।
এদিন তিনি বলেন, “সরকারের পক্ষ থেকে মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি এক বিবৃতি দিয়েছেন। যখনই সরকার ভয় পায়, তখনই তাদের মন্ত্রীরা বিবৃতি দিতে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। এটি এমন একটি সরকার যারা বিরোধীদের ভয় পায়, সংসদে আসতে ভয় পায় এবং প্রশ্ন এড়িয়ে যায়। আমরা চাই প্রধানমন্ত্রী সংসদে এসে মণিপুর হিংসা নিয়ে আলোচনা করুন।”
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য কেন্দ্র ও রাজ্যের বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, যে গোয়েন্দা সংস্থাগুলি কি উত্তর-পূর্ব রাজ্যের হিংসা এবং পরিস্থিতি সম্পর্কে সরকারকে রিপোর্ট দেয়নি?
তিনি আরও বলেন, "কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (অমিত শাহ) কি এই বিষয়ে কোনও রিপোর্ট পাননি বা মুখ্যমন্ত্রী এন. বীরেন সিং রাজ্যের পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছু জানতেন না?" "আমাদের একটাই দাবি যে সরকারকে সংসদে উত্তর দিতে হবে এবং মণিপুরে কী ঘটছে তা দেশের মানুষকে বলতে হবে।"
মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীর নিন্দা করে রঞ্জন বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বলছেন যে ভাইরাল ভিডিওতে মহিলাদের সাথে যেভাবে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে, রাজ্যে সেরকম শত শত ঘটনা ঘটেছে এবং অনেক এফআইআর হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কি এ বিষয়ে সচেতন হবেন না? এটা দুর্ভাগ্যজনক যে এই ধরণের বিষয়ে নিয়েও তাঁরা রাজনীতি করছেন।”
প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এই ভয়ঙ্কর ঘটনায় রাজনীতি করার অভিযোগ এনে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী যখন বিবৃতি দিয়েছিলেন, তিনি প্রথমে রাজস্থান এবং ছত্তিশগড়ের ধর্ষণের ঘটনা উল্লেখ করেছিলেন এবং তারপরে তিনি মণিপুরের কথা উল্লেখ করেছিলেন। আমরা যে কোনো রাজ্যে ধর্ষণের বিরুদ্ধে। কিন্তু আমাদের খুব সাধারণ দাবি হল প্রধানমন্ত্রী সংসদে বিবৃতি দেবেন।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, মন্ত্রী যেমন বলেছেন যে এটি একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা তেমনই জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও আমরা একই কথা বলছি। এটি একটি সীমান্ত এলাকা এবং এমনকি মাদক পাচার হয়। গত ৮০ দিন ধরে সেখানে কীভাবে হিংসা চলছে তার জবাব কি সরকারের দেওয়া উচিত নয়?
তিনি বিজেপির মহিলা সাংসদদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, যে রাজনৈতিক দল মহিলাদের সম্মান করে না আপনাদের সেই দল থেকে পদত্যাগ করা উচিত।
মণিপুর ভাইরাল ভিডিও সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে এর আগে স্মৃতি ইরানি বলেন, "মণিপুর ইস্যুটি শুধুমাত্র সংবেদনশীল নয়, এটি জাতীয় নিরাপত্তার সাথেও জড়িত এবং বিরোধী নেতারাও বিষয়টি জানেন।"
ইরানী অভিযোগ করে বলেন, “বিরোধীদলীয় নেতারা সংসদে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে চাননি।”
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার, সংসদের বর্ষা অধিবেশনের প্রথম দিনে, প্রধানমন্ত্রী মণিপুরের ঘটনা প্রসঙ্গে তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, উত্তর-পূর্ব রাজ্যে মহিলাদের সাথে নৃশংস এই ঘটনা অত্যন্ত লজ্জাজনক এবং অপরাধীদের কখনও ক্ষমা করা হবে না।
তিনি বলেন, "এই ঘটনাটি সমগ্র জাতির জন্য একটি অপমান। কারণ এই ঘটনা ১৪০ কোটি দেশবাসীকে লজ্জা দিয়েছে। মণিপুরে মহিলাদের সাথে যে ঘটনা ঘটেছে তা কখনই ক্ষমা করা যাবে না। আমি দেশবাসীকে আশ্বস্ত করছি যে কাউকে রেহাই দেওয়া হবে না।"
গত ৪ মে মনিপুরে একদল জনতা দুই মহিলাকে নগ্ন করে প্রকাশ্যে হাটতে বাধ্য করে। ১৯ জুলাই এই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে মানুষ বিক্ষোভে সরব হন।
প্রসঙ্গত, গত ৩ মে থেকে মণিপুরে জাতিগত সংঘর্ষ শুরু হয়েছে এবং যার জেরে শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং বহু মানুষ আহত। রাজ্যের হাজার হাজার মানুষ ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন