গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের জেরে গত ৫০ দিনেরও বেশি সময় ধরে উত্তপ্ত মণিপুর। ইতিমধ্যেই শতাধিক প্রাণহানি ও ৩৫ হাজারেরও বেশি মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন উত্তর-পূর্ব ভারতের এই রাজ্যে। জলন্ত মণিপুরে শান্তির বার্তা দিতে সেখানে পৌঁছেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। কিন্তু চুরাচাঁদপুরের ত্রাণ শিবিরে যাওয়ার পথে তাঁকে বাধা দিল মণিপুর পুলিশ। তাঁর কনভয় আটকে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে পুলিশ। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, তিনি ইম্ফলের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন।
এআইসিসির সাধারণ সম্পাদক কেসি বেনুগোপাল জানিয়েছেন, ইম্ফল থেকে ২০-২৫ কিলোমিটার দূরে বিষ্ণুপুর এলাকায় রাহুল গান্ধীর কনভয় আটকে দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, নিরাপত্তার কারণে রাহুল গান্ধীর কনভয় থামানো হয়েছিল। কনভয় উদ্দেশ্য করে কয়েকটি পাথর ছোড়া হয়েছিল।
রাহুল গান্ধীকে ইম্ফল থেকে চপারে করে চুরাচাঁদপুর যাওয়ার কথা বলেছিল পুলিশ। কিন্তু তিনি চপার নিতে অস্বীকার করেছেন বলে জানা গেছে। জাতিগত সহিংসতায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ জেলা হল এই চুরাচাঁদপুর।
বৃহস্পতিবার সকালে দিল্লি থেকে মণিপুরের রাজধানী ইম্ফলের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন রাহুল। সাড়ে ১১টা নাগাদ পৌঁছন ইম্ফল বিমানবন্দরে। এখান থেকে বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু গোড়াতেই আটকে দেওয়া হল তাঁকে।
গত ৫০ দিনেরও বেশি সময় ধরে উত্তর-পূর্ব ভারতের মণিপুরে মেইতেই ও কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষে উত্তপ্ত গোটা রাজ্য। সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত অন্ততপক্ষে ১০০ জন এই সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন এবং আশ্রয় হারিয়েছেন মোটামুটি ৩৫ হাজার মানুষ। বিরোধীদের মতে, রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে চূড়ান্ত ব্যর্থ মণিপুরের বিজেপি সরকার। কেন্দ্রও উত্তর-পূর্ব ভারতের এই রাজ্যে শান্তি ফেরানোর জন্য সেভাবে কোনও বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নেয়নি। এবার সেখানেই শান্তির বার্তা দিতে গিয়েছেন রাহুল গান্ধী।
এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, সফরের প্রথম দিন টুইবংয়ের গ্রিনউড অ্যাকাডেমি ও চুড়াচাঁদপুর গভর্নমেন্ট কলেজেও যাবেন রাহুল। এছাড়াও কোনজেংবামে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি। এরপর মইরাং কলেজেরও একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে তাঁর। মণিপুরের বিভিন্ন জেলায় গিয়ে বেশ কয়েকটি ত্রাণ শিবিরও ঘুরে দেখার পরিকল্পনা রয়েছে রাহুলের, এমনটাই খবর সূত্রে। প্রসঙ্গত, রাহুলই প্রথম জাতীয় স্তরের বিরোধী নেতা হিসেবে জলন্ত মণিপুর সফরে যাচ্ছেন।
রাহুলের এই মণিপুর সফর নিয়ে কংগ্রেস মুখপাত্র সুরেন্দ্র রাজপুত সংবাদসংস্থা পিটিআই-কে জানিয়েছেন, “উনি (রাহুল গান্ধী) দেশের রক্ষক, সেই জন্যই উনি মণিপুরের যাচ্ছেন শান্তি ফেরাতে। কোনও সাংবিধানিক পদে না থাকা সত্ত্বেও উনি ওখানে যাচ্ছেন এটা বলার জন্য যে গোটা দেশ মণিপুরের পাশে রয়েছে।”
উল্লেখ্য, মণিপুরের অশান্ত পরিবেশ নিয়ে গত ২৪ জুন দিল্লিতে একটি সর্বদলীয় বৈঠকের ডাক দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়, মণিপুরের শান্তি ফেরাতে সবরকম চেষ্টা করবে প্রশাসন। যদিও এই বৈঠকে তাদের মত স্পষ্টভাবে জানানোর জন্য পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছিল কংগ্রেস।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন