আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার পতনের ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দাবি করল সিপিআইএম। ওই শিল্প-গোষ্ঠীর শেয়ারে ধস এবং তাদের সম্পত্তির মূল্য কমে যাওয়া নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে মার্কিন সংস্থা হিন্ডেনবার্গ।
কলকাতায় আলিমুদ্দিন স্ট্রীটে হওয়া এক সাংবাদিক বৈঠকে সিপিআইএময়ের সাধারন সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘‘কোটি কোটি দেশবাসীর সম্পদ সুরক্ষিত রাখার প্রশ্ন এখানে জড়িত। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এবং সেবি’কে তদন্ত করতে হবে। সেই সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গড়ে তদন্ত করতে হবে কেন্দ্রকে। তদন্তের নজরদারি করতে হবে সুপ্রিম কোর্টকে। সংসদের বাজেট অধিবেশনে সেই রিপোর্ট পেশ করতে হবে। আমরা দেশবাসীর সঞ্চয় নিয়ে উদ্বিগ্ন।’’
এদিন কেন্দ্রীয় কমিটি বৈঠকের মাঝে হওয়া সাংবাদিক সম্মেলনে ইয়েচুরির সঙ্গে ছিলেন সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও। কেন্দ্রীয় কমিটি বৈঠক শেষ হবে সোমবার। ওই দিন সমাবেশও রয়েছে।
সম্প্রতি মার্কিন সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ তাদের একটি রিপোর্টে আদানির শেয়ারের গরমিলের হিসেব দিয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে কারচুপি করে শেয়ারের দর বাড়িয়েছে আদানি গোষ্ঠী। বিদেশী আর্থিক সংস্থা এবং মার্কিন বন্ডে সম্পদ লেনদেন করেছে এই গোষ্ঠী। সেই লেনদেন স্বচ্ছ নয়। এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পরই দেশবাসীর মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।যদিও উদ্বেগ সত্ত্বেও দেশের ব্যাঙ্ক ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এবং দেশের শেয়ার বাজারের নিয়ামক ‘সেবি’ তদন্তের কথা ঘোষণা করেনি।
ইয়েচুরির কথায় মোদি সরকারের আমলে যৌথ সংসদীয় কমিটি গুরুত্ব হারিয়েছে। হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টে যে চাঞ্চল্যকর দাবি করা হয়েছে তাতে সেবি, আরবিআই-এর পাশাপাশি আরও উচ্চপর্যায়ের তদন্তের প্রয়োজন এবং তা সুপ্রিম করতের নজরদারিতে হওয়া উচিত।
ইয়েচুরির প্রশ্ন, “কারচুপি করে কিভাবে আদানিদের সম্পদ বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে তার তদন্ত হোক। আমাদের প্রধান উদ্বেগ রাষ্ট্রায়ত্ত্ব বিমা কোম্পানি এলআইসি এবং রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংক এসবিআইতে সঞ্চিত সাধারন মানুষের টাকা নিয়ে। এদের টাকা কেন আদানির কোম্পানির মুনাফার জন্য লগ্নিতে ব্যবহার করে দেশবাসীর স্বার্থ বিঘ্নিত করা হয়েছে? নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি এবং আরবিআই কেন নজর দেয়নি এখানে?”
তিনি বলেছেন, ‘‘শেয়ারের দাম পড়ে যাওয়ায় কেবল আদানির সম্পদের মূল্য কমছে না। দেশবাসীর সঞ্চয় বিপন্ন হয়ে পড়ছে। এলআইসি বা স্টেট ব্যাঙ্কে মানুষের জীবনভর উপার্জনের থেকে সঞ্চয় রয়েছে। সঞ্চয় বরবাদ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে এখনই।’’
সিপিআইএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘‘একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করতে হবে। দেশের কোন কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কত অর্থ এমন বিপজ্জনক বিনিয়োগে রয়েছে, তা খুঁজে বার করতে হবে এই কমিটিকে। এই বিপর্যয়ের দায় রয়েছে দেশের অর্থ, বাণিজ্য, বিদেশের মতো একাধিক মন্ত্রকের। তাদের প্রতিনিধিদের রাখতে হবে কমিটিতে।’’
সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হচ্ছে কাল, মঙ্গলবার। চলবে আগামী এপ্রিল পর্যন্ত। তার মধ্যেই তদন্ত শেষ করে রিপোর্ট পেশের দাবি তুলেছে সিপিআইএম।
ইয়েচুরি বলেন, ‘‘কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের নীতিই হলো পুঁজিপতিদের সুরক্ষিত করা। সরকারি সহায়তায় আদানি গোষ্ঠীর উত্থান চোখে পড়ার মতো। পরিকাঠামো ক্ষেত্রে সব প্রায় এদের হাতে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আদানির সম্পর্কও দেশবাসী জানেন। আদানির নিজস্ব জেটে নরেন্দ্র মোদীর ভ্রমণের ছবি সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশিত। এই যোগাযোগের কারণেই দেশের মানুষের সম্পদের লুট হচ্ছে।’’
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে কর্পোরেট বন্ডে গোপন লেনদেনের তথ্য সামনে আনার দাবি ফের জানান ইয়েচুরি। রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী তহবিলে দেওয়ার এই ব্যবস্থার মাধ্যমে ৮০ শতাংশ টাকা পাচ্ছে বিজেপি।
দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে এ দিন ইয়েচুরি বলেছেন, কেন্দ্রের উচিত পরিকাঠামোর মতো ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়িয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। মানুষের হাতে টাকা এলে বাজারে অর্থের জোগান ও চাহিদা বাড়বে। সেই সঙ্গে ১০০ দিনের কাজের মতো প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। কিন্তু বিজেপি সরকার এ সব না করে উল্টে রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পদ বিক্রি করছে!
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন