সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশের কপি নিয়ে জাহাঙ্গিরপুরী পৌঁছালেন সিপিআইএম নেত্রী বৃন্দ কারাট। বুলডোজার দিয়ে সেখানে বেআইনি নির্মাণ ভেঙে ফেলা শুরু করেছিল উত্তর দিল্লি পুরসভা (NDMC)। পুরসভার এই সিদ্ধান্তে স্থগিতাদেশ জারি করে শীর্ষ আদালত।
গত শনিবার হনুমান জয়ন্তীর দিন দিল্লির জাহাঙ্গীরপুরিতে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গাড়ি-দোকান ভাঙচুর, ইটবৃষ্টি থেকে শুরু করে গুলি পর্যন্ত চালানো হয়। আমজনতার পাশাপাশি একাধিক পুলিশ কর্মীও আহত হন। এরপরই দিল্লির বিজেপি সভাপতি আদেশ গুপ্তা হুমকি দেন জাহাঙ্গীরপুরের মসজিদের কাছাকাছি থাকা সমস্ত 'বেআইনি নির্মাণ' বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে। এরপর NDMC-র তরফ থেকেও একই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করা হয়। আজ সকালে ৯টা বুলডোজারের সাহায্যে মসজিদের কাছে রাস্তার ধারে থাকা দোকান ও বাড়ি ভাঙচুর করা শুরু করেন পুরসভার কর্মীরা।
পুরসভার এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেছিলেন বৃন্দা কারাট। সুপ্রিম কোর্টে এটি নিয়ে কথা বলেন সিনিয়র আইনজীবী দুষ্যন্ত দাভে। প্রধান বিচারপতি এন ভি রমনা এই সিদ্ধান্তের উপর স্থগিতাদেশ দিয়ে জানান অবিলম্বে পুরসভার কর্মকর্তাদের এই নির্দেশ জানানো হোক।
এরপরই স্থগিতাদেশের কপি নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান বৃন্দা কারাট। তিনি বলেন, বুলডোজার দিয়ে নির্মাণ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্তের ওপর ১০.৪৫ এ স্থগিতাদেশ জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট। আমি এখানে সেই নির্দেশ কার্যকর করাতে এসেছি।
বৃন্দা কারাত জাহাঙ্গীরপুরীতে এসেই সেখানে নিযুক্ত শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেন। এরপর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, "যেভাবে বুলডোজার দিয়ে সমস্ত কিছু গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছিল আমার মতে তা বেআইনি, সংবিধানবিরোধী। আমাদের সিনিয়র আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্টে আজ বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন। সুপ্রিম কোর্ট স্থগিতাদেশের জারি করেছে। কিন্তু আমি জানতে পেরেছি যে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরেও ভাঙচুর চালানো হচ্ছিল। এটা আদালত অবমাননা। তা বন্ধ করতেই আমি এখানে এসেছি। আমি এখানে এসে বুলডোজার বন্ধ করতে বললেও আমার কথা কেউ শোনেননি। এখানে কোনো ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন না। পুলিশ আধিকারিকদের সুপ্রিম কোর্টের আদেশের কথা বলা আমার দায়িত্ব। এখানের বিশেষ পুলিশ কমিশনার ডি পাঠকের সাথে কথা বলেছি আমি। আমি তাঁকে পরিষ্কার বলেছি, আপনি আইন, সংবিধান, ব্যক্তি অধিকার লংঘন করেছেন। অন্তত সুপ্রিম কোর্টের আদেশকে সম্মান করুন। আমি তাঁকে সুপ্রিম কোর্টের আদেশের অনুলিপি দেখাই। তিনি আমাকে আশ্বস্ত করেছেন আর বুলডোজার চলবে না।"
অবশেষে বৃন্দা কারাতের হস্তক্ষেপে সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশের আদেশের প্রায় দু'ঘণ্টা পর বন্ধ হয় বুলডোজার। জাহাঙ্গীরপুরীর জনগণের কাছে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার আবেদন করেছেন বৃন্দা কারাত। সুপ্রিম কোর্টের পরবর্তী নির্দেশ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেছেন। আগামীকাল এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন