বিজেপিকে বিচ্ছিন্ন করা ও পরাস্ত করার লক্ষ্য নিয়ে শুরু হল সিপিআইএম-এর ২৩তম পার্টি কংগ্রেস। কংগ্রেস চলবে আগামী ১০ এপ্রিল পর্যন্ত। ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতা, সংবিধান, সংবিধানের স্তম্ভগুলোকে ধ্বংস করাই বিজেপির এখন একমাত্র লক্ষ্য। দেশকে হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত করতে হলে দেশের বর্তমান সংবিধান, রাষ্ট্র কাঠামোকে বজায় রেখে কোনোমতেই সম্ভব নয়। তাই বিজেপি সারা দেশে একটা একপার্শ্বিক সংগঠন গড়ে তুলতে চায়। এর বিরুদ্ধে আগামী দিনে মতাদর্শগত, সংগঠনগত এবং সাংস্কৃতিক লড়াইয়ের মধ্যে দিয়েই বিজেপিকে পরাস্ত করার আহ্বান ধ্বনিত হয়েছে পার্টি কংগ্রেসের উদ্বোধনী অধিবেশনে।
উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য মাণিক সরকার। শুরুতে পতাকা উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে সম্মেলনের কাজ শুরু হয়। পতাকা উত্তোলন করেন এস আর পিল্লাই।
এই সম্মেলনে চার বাম দলের নেতৃত্বের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও ফরওয়ার্ড ব্লক-এর সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত বিশ্বাস, আরএসপি-র সাধারণ সম্পাদক মনোজ ভট্টাচার্য এবং সিপিআই(এম-এল)-এর সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য তাঁদের সাংগঠনিক কাজ থাকার জন্য উপস্থিত থাকতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। তবে তাঁরা প্রত্যেকেই পার্টি কংগ্রেসকে অভিনন্দন জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছেন। সেই বক্তব্য পাঠ করেন এম এ বেবী। সিপিআই(এম-এল) তাদের বক্তব্যে জানায় বিহারে সিপিআই(এম)-এর সঙ্গে নির্বাচনী রাজনৈতিক সমঝোতা এক থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে তা এক ছিলো না। সেইজন্য নির্বাচনে এই দুই দল আলাদাভাবেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। তবে জাতীয় স্তরে বিজেপিকে আটকাতে এবং দেশের সম্পদ লুট রুখতে সিপিআইএম যে উদ্যোগ নিচ্ছে সিপিআই(এমএল)-ও সেই উদ্যোগে শামিল হবে। উপস্থিত ছিলেন সিপিআই-এর সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা। তিনি সম্মেলনকে অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন। অন্যান্য দলের পক্ষ থেকে ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্ট তৈরি করার পক্ষে আহ্বান জানানো হয়েছে।
এদিন সম্মেলনের উদ্বোধন করেন সিপিআই(এম)-এর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। তিনি মূলত আন্তর্জাতিক, জাতীয় পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মহামারী বৈষম্যকে প্রচন্ড বাড়িয়েছে। এর সঙ্গে বেড়েছে ক্ষুধা, বেকারি ও দারিদ্র্য। ভারতেও আয় বৈষম্য বেড়েছে। মাত্র ১০ শতাংশ মানুষের হাতে দেশের ৫৭ শতাংশ সম্পদ কুক্ষিগত হয়েছে। নীচের দিকে ৫০ শতাংশর হাতে মাত্র ১৩ শতাংশ সম্পদ রয়েছে। এই আয় বৈষম্যের মধ্যেই একের পর এক জনবিরোধী নীতি কার্যকর করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিজেপি সরকার। এই বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য তিনি পার্টির স্বাধীন শক্তির বিকাশের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, এই স্বাধীন শক্তির বিকাশের ওপরেই নির্ভর করবে বর্তমান দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়া। একইসঙ্গে পার্টির স্বাধীন শক্তি বৃদ্ধি পেলে দেশের অন্যান্য বাম ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করা সহজ হবে।
কেরালার কান্নুরে এই প্রথম পার্টি কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর আগে কেরালায় চার বার পার্টি কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়েছে। অবিভক্ত পার্টি কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়েছিলো কেরালার পালঘাটে। পার্টি ভাগের পর কোচি, ত্রিবান্দ্রমে এবং কোঝিকোড়ে পার্টি কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়েছে। চীন, ভিয়েতনাম, কোরিয়া, কিউবা, লাওস সহ বিশ্বের ৩২ টি দেশ থেকে কমিউনিস্ট এবং ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে পার্টি কংগ্রেসের সাফল্য কামনা করে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন। এই অভিনন্দন বার্তা পাঠ করেন এম এ বেবী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শেষে সমাপ্তি ভাষণ দেন পলিটব্যুরো সদস্য মাণিক সরকার।
এবারের পার্টি কংগ্রেসে উপস্থিত আছেন ৮১৫ জন প্রতিনিধি ও পরিদর্শক। পার্টি কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হচ্ছে ই কে নায়নার মেমোরিয়াল মিউজিয়াম প্রাঙ্গণে। প্রকাশ্য সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে জওহর স্টেডিয়ামে আগামী ১০ এপ্রিল। সম্মেলন উপলক্ষ্যে জওহর স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হয়েছে একেজি নগর। গতকাল ৫ এপ্রিল পতাকা উত্তোলন করে এই নগরের উদ্বোধন করেন পিনারাই বিজয়ন। প্রকাশ্য সমাবেশে সীতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাত, মাণিক সরকার, পিনারাই বিজয়ন প্রমুখ বক্তব্য রাখবেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন