দেশ এতদিন গড়ার ইতিহাস দেখেছে। এখন শুধুই বিক্রির পর্ব দেখছেন। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতির অভিভাষণের উপর আলোচনায় রাজ্যসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এভাবেই নিশানা করল কংগ্রেস। অতীত ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে তুলনা করে তাদের কটাক্ষ, আগের প্রধানমন্ত্রীরা শুধুই গড়েছেন। আর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশের ঐতিহ্য ভেঙে বিক্রি করে চলেছেন। প্রধানমন্ত্রীকে সরকারি সংস্থা বিক্রির কারিগর বলে অভিহিত করলেন কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ রিপুণ বোরা।
পরিসংখ্যান উল্লেখ করে বললেন, ‘রাজীব গান্ধী যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন তিনি ১৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা তৈরি করেছিলেন। অটলবিহারী বাজপেয়ি ১৭টি, আর মনমোহন সিং ২৩টি সরকারি সংস্থা গঠন করেছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা গঠন তো দূর, উল্টে তিনি ২৩টি সংস্থা বিক্রির ব্যবস্থা করেছেন। সেই তালিকা আরও দীর্ঘ হচ্ছে।
আগে সরকারি সংস্থায় চাকরি মিলত। এখন শুধু ছাঁটাই। ভারতের ১৩৮ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ৮৪ কোটি মানুষের আয় বিপুল কমেছে। কর্মহীন প্রচুর। ইউপিএ সরকার ২৭ কোটি মানুষকে দারিদ্রসীমার উপরে তুলে এনেছিল।’ চলতি আর্থিক বছরে ১ লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি টাকার সংস্থা বিক্রির পরিকল্পনা।
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, বুধবার রাহুল গান্ধী যেখানে শেষ করেছিলেন, এদিন সেখান থেকেই শুরু করলেন রিপুণ বোরা। জহরলাল নেহরু থেকে ইন্দিরা গান্ধীর জমানা, একের পর এক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা দিনের আলো দেখেছিল। সব পেট্রলিয়াম সংস্থা, তাবৎ ব্যাঙ্ক ও বিমা কোম্পানির জাতীয়করণ হয়েছিল। পরে রাজীব গান্ধী, নরসিমা রাও, অটলবিহারী বাজপেয়ি ও মনমোহন সিংয়ের আমলে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণ হলেও গড়ে ওঠে একের পর এক নতুন সংস্থাও।
কন্টেনার কর্পোরেশন, ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডর, গেইল ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফিনান্স কোম্পানি-সহ একঝাঁক পেপার কর্পোরেশন। একে একে হয়েছে কোঙ্কন রেলওয়ে কিংবা দিল্লি মেট্রো রেল কর্পোরেশন, ম্যাঙ্গালোর রিফাইনারি, সাউথ ইস্টার্ন কোলফিল্ডস এবং বিএসএনএল। কোনওটাই মোদি জমানায় নয়।
মোদি ক্ষমতায় আসীন হলেন ২০১৪ সালে। তার দুবছর পর ২০১৬ সালের পর থেকেই তালিকা তৈরি শুরু হয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিলগ্নিকরণের প্রক্রিয়া। এখনও পর্যন্ত এই তালিকাভুক্ত হয়েছে ৩৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়, যে সংস্থাগুলি বেসরকারিকরণ হবে বলে ঠিক হয়েছে, সেগুলির বেশিরভাগই লাভজনক সংস্থা এবং কেন্দ্রকে নিয়ম করে ডিভিডেন্ডও দেয়।
গত বছরের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে বৃহৎ আটটি সংস্থা। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের হিসেব, শুধু চলতি আর্থিক বছরেই ১২টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা লভ্যাংশ দিয়েছে নরেন্দ্র মোদি সরকারকে। নবরত্ন, মিনিরত্ন সংস্থার হিসেব আলাদা।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন